গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে “আগামীর নির্বাচন অতীতের যেকোনো নির্বাচনের থেকে অনেক অনেক কঠিন হবে” বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান৷
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) বিকেলে রাষ্ট্র সংস্কারে দলের ৩১ দফা রূপরেখা নিয়ে আয়োজিত এক কর্মশালায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন৷
আগামীর নির্বাচন নিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তারেক বলেন, “আগামীতে যে নির্বাচন হবে, আপনাদের একশো পার্সেন্ট গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি…আপনারা কেউ ভাবতে পারেন, এখানে তো প্রধান প্রতিপক্ষ নাই কিংবা দুর্বল প্রতিপক্ষ, সুতরাং নির্বাচন খুব সহজ হবে৷ নো, নো অ্যান্ড নো৷ এই নির্বাচন অতীতের যেকোনো নির্বাচনের থেকে অনেক অনেক কঠিন হবে৷ কাজেই নিজেদের সেভাবে প্রস্তুত করুন৷”
“আগামীর নির্বাচনে জনগণের সমর্থন নিয়ে নির্বাচনী পুলসিরাত পার হতে হবে৷ সুতরাং জনগণের সঙ্গে থাকুন এবং জনগণকে সঙ্গে রাখুন”, যোগ করেন তিনি৷
দিনব্যাপী এ কর্মশালায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর; এ তিন জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা অংশ নেন৷
এ সময় দলের ভবিষ্যত পরিকল্পনা, দেশের অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ, কৃষি ও শ্রমবাজারসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন কেন্দ্রীয় নেতারা৷
বিকেল চারটার দিকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন তারেক রহমান৷ কর্মশালায় সমাপনী বক্তব্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “আমরা একটা রাজনৈতিক দল, আমরা নির্বাচনে যাবো, সুতরাং আমরা নির্বাচন চাইবো৷ এটা লুকোচুরির কোনো ব্যাপার না৷ জনগণের সমর্থনের ভিত্তিতে যারা আসবে তারা দেশ চালাবে৷ কিন্তু আমরা আমি-ডামি নির্বাচনে বিশ্বাসী না, নিশিরাত বা ভোট-ডাকাতির নির্বাচনে বিশ্বাসী না৷ আমরা স্বচ্ছ ও স্বাভাবিক নির্বাচনে বিশ্বাসী, যেখানে মানুষ নির্ভয়ে ও নির্দ্বিধায় ভোট দিবে৷”
“যেকোনো মূল্যে এ দেশের মানুষের ভোটের অধিকারকে রক্ষা করতে হবে, একইসাথে বাকস্বাধীনতাকে রক্ষা করা আমাদের লক্ষ্য৷ জনগণের আস্থা নিজের পক্ষে রাখতে হলে আচার-আচরণে পরিবর্তন আনতে হবে৷”
নেতা-কর্মীদের তিনি দলের ঐক্য ও জনগণের আস্থা ধরে রাখার নির্দেশনা দেন৷
তারেক রহমান বলেন, “বিগত ১৫ বছর অত্যাচার, নির্যাতন, মিথ্যা মামলার শিকার আপনারা হয়েছেন৷ আমাদের সহকর্মীদের অনেকে হাসপাতালের মেঝেতে, হাতকড়া পরা অবস্থায় জেলে মৃত্যুবরণ করেছেন৷ এত অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করে আপনারা দলের ঐক্য, জনগণের আস্থাকে ধরে রেখেছেন৷ কিন্তু যারা নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য যারা এই আস্থাকে, ঐক্যকে নষ্ট করার চেষ্টা করবে, তাদের শক্ত হাতে দমন করতে হবে৷”
এক্ষেত্রে অধীনস্ত কর্মীদের প্রতি খেয়াল রাখার নির্দেশনা দেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান৷
দলের ঘোষিত ৩১ দফা কর্মপরিকল্পনা নিয়ে গ্রামে-গ্রামে, ঘরে ঘরে যাবার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “দেশের মানুষকে নিয়ে যেসব কর্মসূচি নিয়েছি সে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চাইলে জনগণের সমর্থন নিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় যেতে হবে৷ নাহলে এতদিনের আন্দোলন ব্যর্থ হয়ে যাবে৷ অনৈতিক ও খারাপ কাজ ত্যাগ করে এর বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে হবে৷
এ মুহুর্তে দেশের অধিকাংশ মানুষের সমর্থন উপভোগ করছে৷ এটা অনেক রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তির হিংসার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ এ কারণে অনেক ষড়যন্ত্রও হচ্ছে৷ এ ধরনের ষড়যন্ত্র আগেও হয়েছে৷”
বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “স্বৈরাচারের মাথা পালিয়ে গেলেও লেজ কিন্তু রয়ে গেছে৷ তারা কিন্তু ভেতরে ভেতরে ষড়যন্ত্র কষছে৷ সুতরাং সকলকে এ ব্যাপারে অ্যালার্ট থাকতে হবে৷”
নারায়ণগঞ্জ জেলার কর্মশালাটি সিদ্ধিরগঞ্জের হিরাঝিলে গিয়াসউদ্দিন ইসলামিক মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে আয়োজন করা হয়৷
কর্মশালায় প্রধান আলোচক ছিলেন বিএনপি মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল৷
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকনের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য রেহানা আক্তার রানু, বিএনপি কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সহসাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মনিরুজ্জামান মনির, আজাহারুল ইসলাম মান্নান, মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু প্রমুখ৷