এইচএসসি ও সমমানের ফল বিপর্যয়: কারণ ও উত্তরণে না’গঞ্জে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশের সময় :
বুধবার, ৫ নভেম্বর, ২০২৫
১১৯
🪪
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টায় নারায়ণগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত এক গুরুত্বপূর্ণ সভায় কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শোয়াইব আহমেদ খাঁন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সভার মূল উদ্দেশ্য ছিল সাম্প্রতিক পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলের প্রেক্ষিতে নারায়ণগঞ্জের শিক্ষার মানোন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করা।
সভায় গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. খন্দোকার এহসানুল কবির ও উপসচিব সাবিনা ইয়াসমিন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শোয়াইব আহমেদ খাঁন জানান, জাতীয়ভাবে পাশের হার যেখানে ৫৮ শতাংশ, সেখানে নারায়ণগঞ্জে তা ৫২ শতাংশ। এই কিছুটা ব্যবধানের কারণ হিসেবে তিনি করোনা মহামারি এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে দায়ী করেন। তাঁর মতে, এই দুই ঘটনার প্রভাবে শিক্ষার ছন্দে পতন ঘটেছে, যার ফলস্বরূপ ফলাফল কিছুটা খারাপ হলেও এটিকে কোনো ‘বিপর্যয়’ না বলে একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে দেখতে হবে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, এবারের পরীক্ষায় প্রশ্ন প্রণয়ন ও উত্তরপত্র মূল্যায়নে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছিল এবং সরকার বা মন্ত্রণালয় থেকে কোনো চাপ বা নির্দেশনা ছিল না। এই বাস্তব ফলাফলই আমাদের প্রকৃত শিক্ষাব্যবস্থার প্রতিফলন।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক নিয়ে আলোকপাত করতে গিয়ে তিনি বলেন, “আগে ছাত্ররা শিক্ষকদের ভয় পেত, এখন অনেক সময় শিক্ষকই ছাত্রদের ভয় পান। এতে শিক্ষাব্যবস্থায় একটি দূরত্ব তৈরি হয়েছে, যা খুবই ক্ষতিকর।” তিনি শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও ম্যানেজিং কমিটি- সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান, যাতে শিক্ষার মান উন্নয়ন সম্ভব হয়।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা নারায়ণগঞ্জের ফলাফলে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “এ বছর ২২ হাজার শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়, এর মধ্যে ১১ হাজার শিক্ষার্থী ফেল করেছে- এটি আমাদের জন্য উদ্বেগের বিষয়।”
তিনি অভিভাবকদের উদ্দেশে বলেন, “সন্তানকে জোর করে পড়ালে হয়তো পাশ করানো যাবে, কিন্তু সুশিক্ষিত মানুষ তৈরি হবে না। সন্তানদের প্রতিযোগিতার ঘোড়ায় পরিণত না করে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।”
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন, জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ এ এফ এম মুশিউর রহমান, নারায়ণগঞ্জ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও শিক্ষাবিদ রুমন রেজা, বিকেএমইএ’র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাশুকুল ইসলাম রাজীব, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু, মহানগর জামায়াতের সাবেক আমীর মাওলানা মঈনুদ্দিন আহমাদ, গণসংহতি আন্দোলন জেলার সমন্বয়কারী তরিকুল ইসলাম, এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব আবদুল্লাহ আল আমিন, ইসলামী আন্দোলন মহানগরের সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ, খেলাফত মজলিস মহানগরের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস আহমেদ সহ প্রমুখ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
সভায় বক্তারা সর্বসম্মতভাবে শিক্ষার্থীর মানোন্নয়নে শিক্ষক, অভিভাবক ও প্রশাসনের সমন্বিত উদ্যোগের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এই সমন্বিত প্রয়াসই শিক্ষাব্যবস্থাকে উন্নত করতে পারে বলে তাঁরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।