নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় মাদকাসক্ত ছেলের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে তাকে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধ করে হত্যার পর লাশ ড্রেনে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার জন্মদাতা বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে। এই মর্মান্তিক ঘটনায় পুলিশ নিহত জনি সরকারের বাবা করুণা সরকার (৫৩) এবং মা অনিতা রানী সরকারকে (৪৮) গ্রেফতার করেছে।
বুধবার (ঘটনার তারিখ উল্লেখ করতে পারেন) রাতে ফতুল্লার শিয়াচর লালখা এলাকার নিজ বাড়ি থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ছেলেকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিহত জনি সরকার দীর্ঘদিন ধরে মাদকে আসক্ত ছিলেন। মাদক কেনার টাকার জন্য তিনি প্রায়ই পরিবারের সদস্যদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতেন এবং বাড়ির জিনিসপত্র ভাঙচুর করতেন। তার অত্যাচারে বাবা-মা ও পরিবারের সদস্যরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলেন।
এই পরিস্থিতির জের ধরে গত সোমবার রাতে জনি ঘুমিয়ে পড়লে তার বাবা করুণা সরকার রুটি বানানোর বেলন দিয়ে মাথায় উপর্যুপরি আঘাত করেন। এতে জনি অচেতন হয়ে পড়লে মা-বাবা দুজন মিলে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। এরপর প্রমাণ লোপাটের জন্য ছেলের লাশ একটি বস্তায় ভরে পার্শ্ববর্তী একটি ড্রেনে ফেলে দেন।
ঘটনার পরদিন অর্থাৎ মঙ্গলবার, করুণা সরকার নিজেই বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তিনি পুলিশকে জানান যে, কেউ তার ছেলেকে হত্যা করে লাশ ফেলে রেখে গেছে।
তবে মামলার তদন্তে নেমে পুলিশ ওই এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ শুরু করে। ফুটেজে দেখা যায়, করুণা সরকার ও তার স্ত্রী অনিতা রানী মিলে একটি বস্তা বহন করে নিয়ে যাচ্ছেন, যা পরে তারা ড্রেনে ফেলে দেন। এই ফুটেজকে সূত্র হিসেবে ব্যবহার করে পুলিশ তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে একপর্যায়ে তারা ভেঙে পড়েন এবং হত্যার সম্পূর্ণ ঘটনা স্বীকার করেন।
ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানান, “মাদকাসক্ত ছেলের নিত্যদিনের নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়েই বাবা-মা এই চরম সিদ্ধান্ত নেন বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছেন। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বেলন এবং অন্যান্য আলামত উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।”
এই ঘটনায় পুরো এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। সন্তানের হাতে নির্যাতিত বাবা-মায়ের এমন মর্মান্তিক পরিণতিতে অনেকেই শোক প্রকাশ করেছেন।