নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় আধিপত্য বিস্তার ও অবৈধ সিএনজি স্ট্যান্ডের নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে দুই সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে কুদ্দুস (৪৫) নামে এক নিরীহ পথচারী নিহত হয়েছেন। শনিবার (২১ জুন) রাত আনুমানিক ১০টা ২০মিনিটে রেললাইন সংলগ্ন এলাকায় এই ভয়াবহ ঘটনা ঘটে। এই সংঘর্ষে আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
নিহত কুদ্দুস পেশায় একজন রিকশা শ্রমিক এবং বন্দর উপজেলার নবীগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তিনি প্রতিদিনের মতো কাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলেন। সংঘর্ষের এলাকা পার হওয়ার সময় তিনি দুর্ঘটনাক্রমে মাঝখানে পড়ে যান। এসময় একটি ধারালো অস্ত্রের কোপ তার শরীরে এসে লাগলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এবং ঘটনাস্থলেই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বন্দর রেললাইন সংলগ্ন এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে রনি ও হান্নান গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, ট্রেন থেকে মালামাল চুরি এবং রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই দুই গ্রুপ প্রায়ই সংঘাতে জড়াতো। অভিযোগ রয়েছে, রনি গ্রুপ স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাংশের এবং হান্নান গ্রুপ মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক কাউন্সিলর আবুল কাউসার আশার অনুসারী হিসেবে এলাকায় প্রভাব খাটায়।
স্থানীয়রা জানান, সংঘর্ষের আগের দিন, শুক্রবার, হান্নান গ্রুপের সদস্যরা রনির এক অনুসারীকে মারধর করে। এর প্রতিশোধ নিতেই শনিবার রাতে রনি গ্রুপের সদস্যরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে রেললাইন এলাকায় অবস্থান নেয়। কিছুক্ষণ পরই হান্নান গ্রুপের সদস্যরাও পাল্টা প্রস্তুতি নিয়ে এলে দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ বেধে যায়। গোলাগুলি ও অস্ত্রের মহড়ায় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায় এবং সাধারণ মানুষ প্রাণভয়ে দিগ্বিদিক ছুটতে শুরু করে।
খবর পেয়ে বন্দর থানা পুলিশ ও র্যাবের একাধিক দল ঘটনাস্থলে ছুটে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনাস্থল থেকে ৫ রাউন্ড তাজা গুলি ও বেশ কয়েকটি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করেছে। তবে, এই ঘটনায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।
এ ঘটনায় এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে এবং মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। একজন নিরীহ শ্রমিকের এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও শোক বিরাজ করছে।