তাঁর প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি প্রতিবছর এই দিনটিকে গভীর শ্রদ্ধা ও ভাবগাম্ভীর্যের সাথে ‘জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী’ হিসেবে পালন করে থাকে। এ বছরও দলের প্রতিষ্ঠাতার স্মরণে দেশব্যাপী ২৫ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত ৮ দিনব্যাপী বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনগুলো।
জিয়াউর রহমান ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বগুড়া জেলার গাবতলী উপজেলার বাগবাড়ী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মনসুর রহমান কলকাতায় সরকারি চাকরিতে একজন রসায়নবিদ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। শৈশব ও কৈশোরের একটি অংশ গ্রামে কাটিয়ে পিতার কর্মস্থল কলকাতা এবং দেশভাগের পর করাচিতে তাঁর শিক্ষাজীবন অতিবাহিত হয়।
শিক্ষাজীবন শেষে ১৯৫৩ সালে তিনি তৎকালীন পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমি কাকুলে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৫৫ সালে কমিশনপ্রাপ্ত হন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যখন নিরস্ত্র বাঙালির ওপর নারকীয় গণহত্যা শুরু করে, তখন চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন (যদিও এই ঘোষণা নিয়ে ঐতিহাসিক বিতর্ক বিদ্যমান)। মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি একটি সেক্টরের অধিনায়ক হিসেবে সম্মুখ সমরে নেতৃত্ব দেন এবং বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ‘বীরউত্তম’ খেতাবে ভূষিত হন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তৎকালীন প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক বিশেষ ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এরই ধারাবাহিকতায়, ৩ নভেম্বর ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সংঘটিত সামরিক অভ্যুত্থানে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমদ ক্ষমতাচ্যুত হন এবং সেনাবাহিনীর উপ-প্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দী করা হয়। তবে, ৭ নভেম্বর সিপাহী-জনতার এক ঐতিহাসিক বিপ্লব ও সংহতির মধ্য দিয়ে তিনি মুক্ত হন এবং পরবর্তীতে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
দিবসটি উপলক্ষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বাণীতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের অম্লান স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। তিনি বলেন, “শহীদ জিয়ার মহান আদর্শ, দর্শন ও কর্মসূচি আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুসংহতকরণ, বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং দেশীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য এক রক্ষাকবচ। জাতীয় জীবনের সকল সংকটময় মুহূর্তে, সংগ্রামে ও বিনির্মাণে শহীদ জিয়ার প্রদর্শিত পথ ও আদর্শ আমাদের পাথেয়। এই আদর্শ বুকে ধারণ করেই জাতীয় স্বার্থ রক্ষা, বহুমাত্রিক গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং জনগণের অধিকার সুরক্ষায় ইস্পাতকঠিন গণঐক্য গড়ে তুলতে হবে।”
জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলো আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিল, খাদ্য বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। দলের নেতা-কর্মীরা দিনটিকে শহীদ জিয়ার আদর্শ ও দর্শন নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে অনুপ্রাণিত হওয়ার উপলক্ষ হিসেবে দেখছেন।