বিক্ষোভ পরবর্তী পথসভায় বাংলাদেশ হোসিয়ারি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বদিউজ্জামান বদু বলেন, “আমরা চাঁদাবাজদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে সকল ব্যবসায়ীকে একত্রিত করে এই লাঠিমিছিল করতে বাধ্য হয়েছি। কিছু দুষ্কৃতকারী ও চাঁদাবাজ মার্কেটে এসে মালিকদের কাছে জোরপূর্বক চাঁদা দাবি করছে। আমরা আইনকে শ্রদ্ধা করি, কিন্তু দুঃখজনকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।”
তিনি আরও যোগ করেন, “এই লাঠিমিছিলের মাধ্যমে আমরা এটাই বোঝাতে চেয়েছি যে, প্রয়োজন হলে আমরাও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম। তবে আমরা আইন নিজের হাতে তুলে নিইনি। আমরা শুধু সন্ত্রাসীদের জানিয়ে দিতে চাই—চাঁদাবাজি অব্যাহত রাখলে আমরাও প্রস্তুত আছি।”
বদিউজ্জামান জানান, নয়ামাটি ও করিম সুপার মার্কেট এলাকা হোসিয়ারি ব্যবসার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র, যেখানে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার পণ্য কেনাবেচা হয়। কিন্তু চাঁদাবাজদের অব্যাহত হুমকিতে ব্যবসায়ীরা নির্বিঘ্নে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারছেন না, যা তাদের জন্য নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি করছে।
ব্যবসায়ীদের এমন গুরুতর অভিযোগের বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাছির আহমেদ বলেন, “নারায়ণগঞ্জে বড় কোনো সন্ত্রাসী প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে—এমন কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ আমাদের কাছে নেই। তবে, ছোটখাটো কিছু চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটতে পারে, এবং তাদের বিরুদ্ধে আমাদের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগগুলো এখনো পুরোপুরি সুস্পষ্ট নয়। কেউ যদি নির্দিষ্টভাবে নাম উল্লেখ করে অভিযোগ দায়ের করেন, আমরা অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।”
উল্লেখ্য, নারায়ণগঞ্জ শহরের নয়ামাটি, করিম মার্কেট, গুলশান হল, দেওভোগ হোসিয়ারি মার্কেট এবং উকিলপাড়া এলাকাকে কেন্দ্র করে বিশাল হোসিয়ারি শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে নয়ামাটি ও উকিলপাড়া নিয়ে ‘নারায়ণগঞ্জ হোসিয়ারি সমিতি’ এবং দেওভোগ এলাকায় ‘দেওভোগ হোসিয়ারি মার্কেট’ নামে আলাদা সংগঠন রয়েছে। এই শিল্পাঞ্চলগুলোতে দৈনিক কোটি কোটি টাকার আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন হয়।
একটি অভিযোগ অনুযায়ী, এই শিল্পাঞ্চল পূর্বে ওসমান পরিবারের প্রভাবাধীন ছিল এবং আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ শাসনামলে ওসমান পরিবারের সদস্যরা হোসিয়ারি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন। তবে, গত জুলাই আন্দোলনের পর তারা এলাকা ত্যাগ করলে কয়েক মাস ধরে চাঁদাবাজির প্রকোপ কিছুটা কম ছিল বলে জানা যায়।
কিন্তু ব্যবসায়ীদের সাম্প্রতিক দাবি অনুযায়ী, গত কয়েক মাস ধরে নতুন করে চাঁদাবাজদের উপদ্রব শুরু হয়েছে। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা দাবি ও নানা ধরনের হুমকির ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে, প্রতিশোধের ভয়ে অনেকেই প্রকাশ্যে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা প্রশাসনের কার্যকর ভূমিকা প্রত্যাশা করছেন।