সোমবার(১০ফেব্রুয়ারী) এ এম বদরুজ্জামান উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে বিকেলে “সর্বসেবা ফাউন্ডেশনের” আয়োজনে নদী দূষণ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক আলোচনা সভা হয়ছে।
নারায়ণগঞ্জ জজ কোর্টের পি .পি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল এডভোকেট খোরশেদ আলম মোল্লার সভাপতিত্বে এ এম বদরুজ্জামান উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হাবিবুর রহমান রনির সঞ্চালনায় অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন জেলা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক বাহাউদ্দীন,সরকারি সফর আলী
কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড.আবুল কাসেম মোল্লা,প্রাত্তন অধ্যক্ষ প্রফেসর খালিকুজ্জামান,এ এম বদিউজ্জামাল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এম এ আজিজ,নারায়ণগঞ্জ জজ কোর্টের সহকারী পিপি এডভোকেট মোহাম্মদ মশিউর রহমান শাহীন,পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসাইন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আড়াইহাজার মাসুদুর রহমান, বিডি ক্লিন আড়াইহাজার সমন্বয়ক রাকিবুল ইসলাম সর্বসেবা ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক নাদিম সহ প্রমুখ।
বক্তারা তাদের বক্তব্যে বলেন, বাঙালির সভ্যতা-সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে নদীকে কেন্দ্র করেই। মিশরকে নীল নদের দান বলা হয়; তেমনি নদীমাতৃক বাংলাদেশকে গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা নদ-নদীর দান বলা যায়। বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে অভিন্ন ৫৭টি নদী। নদী বিধৌত এদেশে ছোট-বড় মোট ২৩০টি নদী আছে আর শাখা-প্রশাখাসহ নদীর সংখ্যা প্রায় ৮০০টি। এ নদীগুলো সারাদেশে রক্তের শিরা-উপশিরার মতো বহমান। মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র, শীতলক্ষ্যা, ধলেশ্বরী, বুড়িগঙ্গা এবং বালু নদী পরিবেষ্টিত নারায়ণগঞ্জ জেলা। এই নদীগুলো নারায়ণগঞ্জের পরিবেশের বিচিত্র অনুষঙ্গ। আমাদের দেশের একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জীবন ও জীবিকার সম্পর্ক রয়েছে নদীর সাথে। খরস্রোতা নদীগুলোতে জেলেরা মাছ ধরত, নৌকাবাইচ হতো, উৎসবের আমেজে মেতে উঠতো নদী পাড়ের মানুষগুলো। কৃষি, মৎস্য, জেলেদের পেশা এবং সংস্কৃতির পাশাপাশি মানুষের নিত্যদিনের কাজের জন্য প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক সম্পদ সবকিছুর একমাত্র উৎস ছিল এই নদীগুলো। বাংলাদেশের নদীগুলো মিঠা পানির প্রধান উৎস এবং দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ। কিন্তু আমাদের দায়িত্বহীনতায় নদীগুলো দখল ও দূষণের শিকার। গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত সর্বত্রই ময়লা আবর্জনা নদীতে ফেলছি। কিন্তু সেই নদী আজ দখল, দূষণ আর ভরাটের প্রতিযোগিতায় বিপন্ন; অনেকাংশে বিলুপ্ত। নদীগুলোর নাব্যতা হারানোর নানাবিধ কারণের মধ্যে অবৈধ দখলদারিত্ব, অপরিকল্পিত নদীশাসন, দূষণ, ভরাট, অপরিকল্পিত ড্রেজিং, ইচ্ছামতো বাঁধ নির্মাণ ইত্যাদি অন্যতম। সব নিয়মনীতি উপেক্ষা করে নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছে বড় বড় কলকারখানা, শত শত বাঁধ। দূষণ-দখলের কবল থেকে কিছুতেই বাঁচানো যাচ্ছে না ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা আর শীতলক্ষ্যা নদীকে। প্রতিদিনই বাড়ছে দূষণ; বাড়ছে দখলদারদের সংখ্যাও। প্রভাবশালীরা নদী ভরাট করে দখলের উৎসবে মেতেছে। নদীগুলোকে গিলে খাচ্ছে পলিথিনসহ শিল্প-কারখানার বিষাক্ত কেমিক্যাল ও বর্জ্য, হাসপাতাল-ক্লিনিকের পরিত্যক্ত কেমিক্যাল, লঞ্চ-জাহাজের পোড়া তেল, মবিল, ওয়াসার পয়ঃবর্জ্য, গৃহস্থালি বর্জ্য প্রভৃতি। নদীর মিঠা পানির মাছ বিলুপ্ত হয়েছে বহু আগে। জীব বৈচিত্র্যও নেই। এ নদীর পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন প্রায় শূন্যের কোঠায়। আদালতের রায় অনুযায়ী নদীগুলো এখন ‘জুরিসটিক পারসন’ বা ‘লিগ্যাল পারসন’। এর মধ্য দিয়ে মানুষের মতো নদীরও মৌলিক অধিকার স্বীকৃত হয়েছে। সুতরাং নদীকে হত্যা করার অর্থ হলো বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে হত্যা করা।
বক্তব্যরা আরো বলেন,সমাজ থেকে মাদকাসক্তি দূর করতে পরিবারের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি পরিবারের সচেতনতা, ভালবাসা, দৃঢ় অঙ্গীকার ও সক্রিয় ভূমিকা মাদকাসক্তি নামক বিভীষিকাকে কঠোরভাবে প্রতিরোধ করবে। একই সাথে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার এবং প্রত্যেক পরিবার, সমাজ এবং সরকারকে একাজে এগিয়ে আসতে হবে।