নারায়ণগঞ্জের বন্দরে ধামগড় এলাকায় মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে, যেখানে ৯ বছর বয়সী হুমায়রা জান্নাত রাইসার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে ধামগড় ফাঁড়ির পুলিশ।
ঘটনাটি ঘটে ২ অক্টোবর, বুধবার দিবাগত রাত ১২টা ১০ মিনিট থেকে ১টা ৩০ মিনিটের মধ্যে, বন্দর উপজেলার ধামগড় এলাকার আব্দুল মান্নাফ মিয়ার ভাড়াটিয়া বাড়িতে।
মৃতদেহটি ভোর ৩ টার দিকে পাওয়া যায় বাড়ির নিচতলার বারান্দার গ্রিলের সাথে ওড়না দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায়।
মৃত কিশোরীর পরিচয়
নিহত কিশোরী হুমায়রা জান্নাত রাইসা সুনামগঞ্জ জেলার সাখাতি এলাকার প্রবাসী মোহাম্মদ আলী মিয়ার মেয়ে। তার বাবা প্রবাসে থাকার কারণে, রাইসা অনেকদিন ধরে তার নানা-নানির সাথে ধামগড় এলাকায় ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করছিল। রাইসা স্থানীয় কোনো বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছিল কি না, তা জানা যায়নি, তবে প্রতিবেশীদের সঙ্গে তার খুব বেশি মেলামেশা ছিল না বলে জানা গেছে।
ঘটনার বিবরণ
রাত ১২টা ১০ মিনিট থেকে ১টা ৩০ মিনিটের মধ্যে যে কোনো সময় এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে। পরিবার থেকে জানানো হয়েছে, রাইসা সেদিন রাতে সাধারণভাবেই ঘুমাতে গিয়েছিল। তবে কেন এবং কীভাবে এই ঘটনা ঘটল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। পরিবারের সদস্যদের দাবি, রাইসার মধ্যে কোনো মানসিক সমস্যা বা আত্মহত্যার কোনো প্রকারের লক্ষণ ছিল না।
পুলিশি তৎপরতা ঘটনাস্থলে এসে ধামগড় ফাঁড়ির এসআই মোঃ মাহমুদুল হাসান স্থানীয়দের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করেন এবং মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করেন। এসআই মাহমুদুল হাসান বলেন, “আমাদের তদন্ত অব্যাহত রয়েছে, এবং আমরা ঘটনাস্থলের প্রত্যেকটি প্রমাণ পরীক্ষা করছি। আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়াও চলছে।”
আত্মহত্যা নাকি হত্যাকাণ্ড?
প্রাথমিকভাবে পুলিশ এটিকে আত্মহত্যার ঘটনা হিসেবে দেখছে, তবে রহস্যজনক পরিস্থিতি এবং পরিবারের বক্তব্য তদন্তে অন্য দিকও খতিয়ে দেখছে। কিশোরীর পরিবারের সদস্যরা বলছেন, রাইসার আত্মহত্যা করার কোনো কারণ ছিল না এবং তার মধ্যে এমন কোনো আচরণ দেখা যায়নি যা আত্মহত্যার ইঙ্গিত দেয়। এই তথ্যগুলোকে মাথায় রেখে পুলিশ এখন বিভিন্ন দিক থেকে তদন্ত করছে, এবং প্রতিবেশীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এলাকাবাসীর প্রতিক্রিয়া
এলাকার লোকজন এই ঘটনার পর আতঙ্কিত। অনেকেই বলছেন, ছোট মেয়ে রাইসা সবসময় চুপচাপ থাকত এবং কারো সঙ্গে তেমন মিশত না। এমন একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটায় এলাকাবাসীর মধ্যে শোক ও উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। স্থানীয়রা পুলিশের দ্রুত পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে, তবে তারা আশাবাদী যে সত্য উদঘাটিত হবে এবং প্রকৃত ঘটনা সামনে আসবে।
পরবর্তী পদক্ষেপ
ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে আসার পরই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ সম্পর্কে আরও পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে। এদিকে, পুলিশ অন্যান্য সম্ভাব্য কারণগুলোর দিকেও নজর দিচ্ছে। রাইসার ঘরের আশপাশ থেকে কোনো চিরকুট বা অন্যান্য প্রমাণ পাওয়া গেছে কিনা, তা তদন্তের অংশ হিসেবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এই রহস্যময় ঘটনাটি আত্মহত্যা নাকি অন্য কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের ফল, তা নিশ্চিত করতে পুলিশ গভীরভাবে তদন্ত করছে।