নারায়ণগঞ্জের বন্দরে ঠিকাদারি কাজের বিরোধকে কেন্দ্র করে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও একসময়ের বিএনপি নেতা আতাউর রহমান মুকুলকে মারধর ও লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে। রোববার দুপুরে হরিপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের সামনে প্রতিপক্ষরা তাকে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ আখ্যা দিয়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে মারধর করে এবং তার পরনের পোশাক ছিঁড়ে ফেলে। ভুক্তভোগীর অভিযোগ, চাঁদা না দেওয়ায় স্থানীয় এক বিএনপি নেতার অনুসারীরা এ হামলা চালিয়েছে।
ভুক্তভোগী আতাউর রহমান মুকুল (৬৮) বন্দর উপজেলার দুইবারের সাবেক চেয়ারম্যান। রোববার (২৯ জুন) দুপুরে উপজেলার হরিপুর ৪১২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের সামনে এই ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বন্দর থানায় অভিযোগ দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী জানান, হরিপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রে একটি কাজের দরপত্র পেয়েছিল ‘এমএস দেওয়ান এন্টারপ্রাইজ’ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সেই প্রতিষ্ঠানের পক্ষেই কাজটির আনুষ্ঠানিকতা সারতে বিদ্যুৎকেন্দ্রে গিয়েছিলেন আতাউর রহমান মুকুল।
হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে মুকুল সাংবাদিকদের বলেন, “আমি নিজে ঠিকাদারি করি এবং বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজটি করার দায়িত্ব পেয়েছি। সরকারি কাগজপত্রে স্বাক্ষর করতে সেখানে যাওয়ার পরপরই আমার উপর হামলা হয়। আমাকে গাড়ি থেকে টেনে-হিঁচড়ে নামিয়ে মারধর করে জামা-কাপড় সব ছিঁড়ে ফেলে।”
তিনি আরও বলেন, “হামলাকারীরা স্থানীয় বিএনপি নেতা বজলুর রহমানের অনুসারী। বজলুর রহমানের সঙ্গে আমার কখনই খারাপ সম্পর্ক ছিল না, আমরা একসঙ্গে জেলও খেটেছি। কিন্তু সে আমার উপর এভাবে হামলা করাবে, তা ধারণাও করতে পারিনি।”
ঘটনার কয়েকদিন আগেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘এমএস দেওয়ান এন্টারপ্রাইজ’-এর পক্ষ থেকে বজলুর রহমান ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছিল। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, চাঁদা না দিলে কাজ করতে দেওয়া হবে না বলে হুমকি দেওয়া হয়েছিল।
আতাউর রহমান মুকুল জানান, হামলার আশঙ্কায় তিনি পুলিশকে অবগত করেই ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন এবং ঘটনার সময় সেখানে চারজন পুলিশ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, “পুলিশও তাদের থামাতে পারেনি।”
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) তারেক আল মেহেদী বলেন, “নিরাপত্তাজনিত শঙ্কার কারণেই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ পৌঁছানোর কয়েক মিনিটের মধ্যেই ঘটনাটি ঘটে যায়। পুলিশ সদস্যরা তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আহত ব্যক্তিকে উদ্ধার করে।”
এই ঘটনায় অভিযুক্ত বজলুর রহমান সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি। ঘটনার পর থেকে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তবে একটি গণমাধ্যমে তিনি দাবি করেছেন, কাজটি স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার প্রতিষ্ঠান পেয়েছে। মুকুল সেই নেতার পক্ষ নেওয়ায় ‘ক্ষুব্ধ স্থানীয় জনতা’ তাকে মারধর করেছে। এই ঘটনার সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে তিনি অস্বীকার করেন।
উল্লেখ্য, আতাউর রহমান মুকুল নিজেও বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং মহানগর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ছিলেন। তবে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
এদিকে, মুকুলকে মারধরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, তাকে প্রাইভেটকার থেকে টেনে নামিয়ে মাটিতে ফেলে মারধর করা হচ্ছে এবং তার পরনের পাঞ্জাবি-পায়জামা ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে।
বন্দর থানার ওসি লিয়াকত আলী জানিয়েছেন, এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশ ইতোমধ্যে অভিযান শুরু করেছে।