যে অভিযোগে যুবদল নেতা বহিষ্কার, সেই অভিযোগ আদালতে মিথ্যা প্রমানিত !
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশের সময় :
শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
১৫৮
🪪
নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলা যুবদলের রাজনীতিতে স্বস্তি ফিরে এসেছে। দীর্ঘদিনের টানাপোড়েন ও মিথ্যা অভিযোগের বেড়াজাল ছিন্ন করে অবশেষে নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফ ভূঁইয়া। চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় যুবদল তাকে বহিষ্কার করলেও, আদালতের তদন্ত প্রতিবেদনে সেই অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। উল্টো যারা আশরাফ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলেছিলেন, তাদের বিরুদ্ধেই আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। এই ঘটনায় নেতাকর্মীরা আশাবাদী, কেন্দ্রীয় যুবদল দ্রুতই আশরাফ ভূঁইয়াকে তার স্বপদে ফিরিয়ে দেবে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছর ধরে রাজপথে সক্রিয় আন্দোলন-সংগ্রামে আশরাফ ভূঁইয়া সোনারগাঁওয়ের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক নিষ্ক্রিয় থাকাকালীন তিনি একাই নেতৃত্ব দিয়ে আন্দোলনকে সচল রেখেছিলেন এবং এই কারণে হামলা-মামলা-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কিন্তু ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর সুযোগসন্ধানী জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ কিছু ব্যক্তি বিএনপিতে অনুপ্রবেশ করে আশরাফ ভূঁইয়াকে মাইনাস করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। এই ষড়যন্ত্রের ফলস্বরূপ, ১৭ জানুয়ারি স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমে “যুবদল নেতার বিরুদ্ধে কোটি টাকার মালামাল লুটের অভিযোগ” শিরোনামে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশিত হয়।
ঘটনার সূত্রপাত, ১৫ জানুয়ারি এ এন্ড জেড টেক্সটাইল মিলসের মালিক আনোয়ার হোসেন, জমি সংক্রান্ত বিরোধকে পুঁজি করে আশরাফ ভূঁইয়াসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে কোটি টাকার মালামাল লুট ও মিথ্যা চাঁদা দাবির অভিযোগ এনে সোনারগাঁও থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এর পাল্টা হিসেবে, ২২ জানুয়ারি এমদাদুল হক দিপু চাঁদাবাজির অভিযোগে আনোয়ার হোসেন, গোলজার হোসেন ও শহীদুল্লাহসহ তাদের বাহিনীর ৭ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেন। চাঁদাবাজির মামলা থেকে বাঁচতে একই দিনে আনোয়ার হোসেন, আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ গোলজার হোসেন ও শহীদুল্লাহ মিথ্যা অভিযোগ তুলে আশরাফ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে সাংবাদিক সম্মেলন করেন। এই একতরফা সংবাদ প্রকাশের পরদিন, ২৩ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় যুবদল আশরাফ ভূঁইয়াকে বহিষ্কারের ঘোষণা দেয়।
আনোয়ার হোসেনের মিথ্যা অভিযোগে সোনারগাঁও থানা পুলিশ মামলা গ্রহণ না করলেও, ২১ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সোনারগাঁও আমলী আদালতে আশরাফ ভূঁইয়াকে ১নং আসামি করে ১৯ জনের বিরুদ্ধে মিলের কোটি টাকার মালামাল লুট ও ২৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি (পিটিশন-২৮/২৫) পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। দীর্ঘ তদন্ত শেষে পিবিআই আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে, যেখানে আশরাফ ভূঁইয়ার কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, বাদী আনোয়ার হোসেনের সাথে রূপগঞ্জ থানাধীন মাসাবো এলাকার নজরুল টেক্সটাইল মিলের পেছনের জমি নিয়ে বিরোধ থাকায় আশরাফ ভূঁইয়াকে মিথ্যাভাবে আসামি করা হয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায়, ১৮ এপ্রিল “ব্যবসায়ীর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে হত্যাচেষ্টা” শিরোনামে গোলজার হোসেনের মিথ্যা বিবৃতিতে আশরাফ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশিত হলে, ২৭ এপ্রিল আশরাফ ভূঁইয়া গোলজার হোসেনের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রূপগঞ্জ আমলী আদালতে একটি মানহানির মামলা (পিটিশন-১৭৮/২৫) দায়ের করেন। আদালত মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিলে, দীর্ঘ তদন্ত শেষে পিবিআই গোলজার হোসেনের মিথ্যা বিবৃতির সত্যতা পেয়ে তার বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে।
এছাড়াও, ১৬ ফেব্রুয়ারি ইয়ামিন ভূঁইয়া বাদী হয়ে শহীদুল্লাহ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ, প্রতারণা ও জাল জালিয়াতির অভিযোগে নারায়ণগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সোনারগাঁও আমলী আদালতে মামলা দায়ের করেন (পিটিশন মামলা নং ৬৪/২০২৫)। আদালত এই মামলাও পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন এবং তদন্ত শেষে শহীদুল্লাহর বিরুদ্ধে ঘটনার সত্যতা পেয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। এই মামলায় আদালত শহীদুল্লাহর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।
এই ঘটনাপ্রবাহের পর সোনারগাঁও উপজেলা যুবদলের নেতাকর্মীরা প্রাণ ফিরে পেয়েছেন। আদালতের মাধ্যমে সত্য প্রমাণিত হওয়ায় আশরাফ ভূঁইয়ার জনপ্রিয়তা আরও বেড়েছে। নেতাকর্মীরা দাবি তুলেছেন যে, আশরাফ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছিল এবং তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন। তারা আশরাফ ভূঁইয়াকে সোনারগাঁও উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সহ তার সকল পদে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
নেতাকর্মীরা মনে করেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছর ধরে রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে আশরাফ ভূঁইয়া তার যোগ্যতার প্রমাণ রেখেছেন। একজন পরিচ্ছন্ন ও ত্যাগী নেতাকে নেতৃত্বের বাইরে দেখতে চায় না সোনারগাঁও উপজেলা যুবদলের নেতাকর্মীরা। তাদের প্রত্যাশা, কেন্দ্রীয় যুবদল আশরাফ ভূঁইয়ার প্রতি সুবিচার করবে এবং তাকে তার প্রাপ্য সম্মান ও দায়িত্ব ফিরিয়ে দেবে।