শুক্রবার (৩০ মে) বিকেল ৫টায় নারায়ণগঞ্জ শহরের ২ নম্বর রেলগেট এলাকায় সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার উদ্যোগে এক মানববন্ধন ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের জেলা সভাপতি আবু নাঈম খান বিপ্লব।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির ফলে শ্রমজীবী মানুষের জীবনযাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। ঈদের আগে পরিবার-পরিজনের জন্য কেনাকাটার আশায় শ্রমিকরা অতিরিক্ত পরিশ্রম করলেও সময়মতো বেতন-বোনাস না পাওয়ায় তাদের সেই স্বপ্ন ফিকে হয়ে যায়।
নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন, সরকার মে মাসের মধ্যে বোনাস পরিশোধের নির্দেশনা দিলেও অধিকাংশ শিল্প-কারখানায় তা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। তারা বলেন, “বেসিক বেতনের অর্ধেক দিয়ে বোনাসের নামে যা দেওয়া হয়, তা একপ্রকার বকশিশ। এই পরিস্থিতি পরিবর্তনে শ্রম আইন সংশোধন করে সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো পূর্ণ উৎসব ভাতা প্রদান বাধ্যতামূলক করতে হবে।”
আগামী ৭ জুন ঈদুল আযহা অনুষ্ঠিত হবে উল্লেখ করে নেতৃবৃন্দ এর পূর্বেই মে মাসের সম্পূর্ণ বেতন ও বোনাস পরিশোধের দাবি জানান। হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তারা বলেন, “যেসব মালিক বা প্রতিষ্ঠান বেতন-বোনাস পরিশোধে গড়িমসি করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায়, উদ্ভূত শ্রমিক অসন্তোষের দায় মালিকপক্ষ ও প্রশাসনকেই বহন করতে হবে।”
বক্তারা আরও বলেন, আগামী ২ জুন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা হওয়ার কথা। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বাজেটের আকার প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকা হলেও প্রতি বছর শ্রমিকদের কল্যাণে উল্লেখযোগ্য কোনো বরাদ্দ রাখা হয় না। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “বছরের পর বছর বাজেটের আকার বাড়লেও শ্রমিকদের খাদ্য নিরাপত্তা, আবাসন বা চিকিৎসার কোনো সুরাহা হয় না। বরং কর ও ঋণের বোঝা বাড়িয়ে মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি করা হচ্ছে, যার চরম ভুক্তভোগী হচ্ছে দেশের শ্রমজীবী মানুষ।”
সমাবেশে গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি সেলিম মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শরীফ, সহ-সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সোহাগ, রি-রোলিং স্টিল মিলস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি জামাল হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এছাড়াও, সমাবেশ থেকে বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিল এবং এই আইনে গ্রেপ্তার হওয়া শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সকল মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানানো হয়। নেতৃবৃন্দ বলেন, “শ্রমিকদের ন্যায্য দাবির পক্ষে আন্দোলন করায় গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি সেলিম মাহমুদ, রবিনটেক্স শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সীমা আক্তার, চট্টগ্রামে বাসদ ইনচার্জ আল কাদেরী জয়, ছাত্র ফ্রন্ট সভাপতি মিরাজউদ্দিন ও রিকশা শ্রমিক নেতা রোকনের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করা হয়েছে। ১৯৭৪ সালের এই কালো আইন অতীতে বহুবার গণআন্দোলন দমনে ব্যবহৃত হয়েছে। এখন একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এসে শ্রমিক আন্দোলন দমনে এই আইন ব্যবহার করছে—এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।” তারা অবিলম্বে এই আইন বাতিল এবং সংশ্লিষ্ট সকল নেতার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।