নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে হোসিয়ারি শ্রমিক ফারুক আহমেদকে (বয়স উল্লেখ করা যেতে পারে যদি জানা থাকে) নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত কিশোর গ্যাং লিডার মো. আনাস প্রধানকে (২০) গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১১)। সোমবার (২৬ মে, ২০২৫) বিকেলে র্যাব-১১ ও র্যাব-৩ এর একটি যৌথ দল ঢাকার হাজারীবাগ থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে। এই হত্যাকাণ্ড নারায়ণগঞ্জে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য এবং এর নির্মম শিকার হওয়ার এক মর্মান্তিক চিত্র ফুটিয়ে তুলেছে।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, নিহত ফারুক স্থানীয় একটি হোসিয়ারি কারখানায় মাসিক বেতনে কর্মরত ছিলেন। গ্রেপ্তারকৃত আনাস ও তার সহযোগীদের সঙ্গে ফারুকের এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও ‘ছোট ভাই-বড় ভাই’ সংক্রান্ত বিষয়ে প্রায়শই কথা কাটাকাটি হতো। এর জের ধরে আনাস ও তার দল ফারুককে বিভিন্ন সময়ে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছিল।
গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর (২০২৪), শুক্রবার, আনুমানিক রাত ৮টার দিকে, ফারুক তার কর্মস্থল থেকে বাসায় ফেরার পথে ওঁৎ পেতে থাকা আনাসসহ ৭-৮ জন সন্ত্রাসী কিশোর দেশীয় ধারালো চাপাতি, ছুরি ও লাঠিসোটা নিয়ে তার ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। হামলাকারীরা ফারুকের গতিরোধ করে, ধাক্কা দেয় এবং এলোপাতাড়ি কুপিয়ে তাকে রক্তাক্ত জখম করে। ফারুক মাটিতে লুটিয়ে পড়লে এবং জীবন বাঁচাতে চিৎকার শুরু করলে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে আসতে থাকায় হামলাকারীরা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এই নৃশংস ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ সংরক্ষিত রয়েছে।
স্থানীয়রা মুমূর্ষু অবস্থায় ফারুককে উদ্ধার করে প্রথমে খানপুর ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে পরদিন, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। তবে, আর্থিক সংকটের কারণে ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে ফারুক পর্যাপ্ত চিকিৎসা ছাড়াই হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি চলে আসেন। বাড়িতে আসার পর তার শারীরিক অবস্থা পুনরায় আশঙ্কাজনক হয়ে পড়লে তাকে আবারও ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
প্রাথমিকভাবে এ ঘটনায় একটি মারামারির মামলা দায়ের করা হলেও ফারুকের মৃত্যুর পর তা হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয় (সিদ্ধিরগঞ্জ থানার মামলা নং-০৭, তারিখ- ০৬/০২/২৫)। মামলা রুজু হওয়ার পর র্যাব-১১ ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আসামিদের শনাক্তকরণের চেষ্টা চালায়।
নিজস্ব গোয়েন্দা নজরদারি ও তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-১১ ও র্যাব-৩ এর যৌথ আভিযানিক দল সোমবার (২৬ মে, ২০২৫) বিকেল ৪টায় ডিএমপি ঢাকার হাজারীবাগ থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। এই অভিযানে মামলার এজাহারনামীয় ০২নং আসামি এবং কিশোর গ্যাং লিডার মোঃ আনাস প্রধানকে (২০), পিতাঃ মহসিন প্রধান, থানাঃ সিদ্ধিরগঞ্জ, জেলাঃ নারায়ণগঞ্জ, গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
গ্রেপ্তারকৃত আনাসকে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। র্যাব-১১ জানিয়েছে, মামলার এজাহারভুক্ত অন্যান্য পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে তাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এই ঘটনায় জড়িত সকল অপরাধীকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী ও নিহতের পরিবার।