দেশব্যাপী ত্রাস সৃষ্টিকারী আন্তঃজেলা সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের কুখ্যাত সর্দার আব্দুল হালিম ওরফে নাকবোঁচা হালিম এবং বাদল বাহিনীর প্রধানকে অবশেষে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-১১। সম্প্রতি র্যাব-১১ এর দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় সংগঠিত একাধিক ডাকাতির ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গোয়েন্দা নজরদারি ও নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এই সাফল্য অর্জিত হয়েছে। বিশেষ করে, নাকবোঁচা হালিম ও বাদল বাহিনীর অপতৎপরতা র্যাবের বিশেষ নজরে আসে এবং তাদের ধরতে সাঁড়াশি অভিযান চালানো হয়।
র্যাব-১১ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন মৌচাক বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে দুর্ধর্ষ ডাকাত সর্দার আব্দুল হালিম ওরফে নাকবোঁচা হালিমকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
গ্রেফতারকৃত ডাকাত সর্দার নাকবোঁচা হালিমের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, সে ও তার দল ২০১২ সাল থেকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ফরিদপুর, বরগুনা, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী ও মুন্সিগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় ভয়ংকর ডাকাতি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। তাদের প্রধান লক্ষ্যবস্তু ছিল বিভিন্ন শহরের অবস্থাসম্পন্ন ও অর্থনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বাসাবাড়ি। হালিমের দলে ৭ থেকে ১৫ জন সদস্য রয়েছে, যাদের অধিকাংশই বরগুনা সদর ও আমতলী থানার স্থায়ী বাসিন্দা। ডাকাতির সময় তারা আগ্নেয়াস্ত্রসহ বিভিন্ন দেশীয় ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করত।
আব্দুল হালিম ওরফে নাকবোঁচা হালিম (৫০), পিতা- আলতাফ চৌকিদার, সাং- জাকির তবক, থানা- বরগুনা সদর, জেলা- বরগুনা, এক মূর্তিমান আতঙ্ক। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ডাকাতি মামলা ১০টি, অস্ত্র মামলা ২টি, হত্যা প্রচেষ্টা মামলা ৪টি, নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা ২টি, মাদক মামলা ২টি এবং মানবপাচার মামলা ১টিসহ মোট ২২টি মামলা চলমান রয়েছে। সে ২০১২ সাল থেকে গ্রেফতার হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রায় ১৫টি চাঞ্চল্যকর ডাকাতির ঘটনায় সরাসরি জড়িত ছিল বলে জানিয়েছে।
গত ২৭ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানাধীন সন্তাপুর এলাকার ব্যবসায়ী ও ঢাকা টেক্সটাইল মিলের মালিক রেজাউল করিম মালার বাড়িতে এক দুঃসাহসিক ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতরা জানালার গ্রিল কেটে ঘরে প্রবেশ করে অস্ত্রের মুখে পরিবারের সদস্যদের জিম্মি করে হাত-পা ও মুখ বেঁধে ফেলে। এরপর তারা আনুমানিক ৫০ ভরি স্বর্ণালংকারসহ প্রায় ৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় ব্যবসায়ী রেজাউল করিম মালার ছেলে মোঃ আলাউদ্দিন বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় একটি ডাকাতি মামলা দায়ের করেন। ঘটনাটি বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হলে দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয় এবং জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
এই ঘটনার পর র্যাব-১১ দ্রুততার সাথে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে এবং পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে, গত ২৩ মে ২০২৫ তারিখ রাত আনুমানিক ১১টা ১০ মিনিটে র্যাব-১১, সদর কোম্পানী, নারায়ণগঞ্জের চৌকস আভিযানিক দলটি সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে উক্ত ডাকাতির ঘটনার প্রধান আসামী আব্দুল হালিম ওরফে নাকবোঁচা হালিমকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হালিম ফতুল্লার ওই ডাকাতির ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। সে আরও জানায়, লুন্ঠিত মালামাল থেকে সে ভাগে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা পেয়েছিল।
র্যাব-১১ জানিয়েছে, এই চক্রের সাথে জড়িত অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারের জন্য তাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান। এই গ্রেফতারের ফলে বিভিন্ন জেলায় সংগঠিত হওয়া ডাকাতির ঘটনার রহস্য উদঘাটন এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।