র্যাব জানায়, চলতি বছরের গত ০২ জানুয়ারি ফতুল্লার পূর্ব লামাপাড়া নয়ামাটি মার্কাস মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় নিজ শ্বশুরবাড়িতে গৃহবধূ লামিয়া আক্তার ফিজা (২১)-কে গলায় ওড়না ও গামছা প্যাঁচানো অবস্থায় ঝুলন্ত উদ্ধার করা হয়। তবে তার শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন (ডান হাতের আঙ্গুলে, বাম হাতের বাহুসহ গলায় লালচে দাগ) থাকায় এটি একটি হত্যাকাণ্ড বলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়। এই ঘটনায় ভিকটিমের বাবা মোহাম্মদ আলী বাদী হয়ে ০৬ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে ফতুল্লা মডেল থানায় জামাতা আসাদুজ্জামান ওরফে মুন্নাকে প্রধান আসামি করে মোট ১২ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা (নং-৯, ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড ১৮৬০) দায়ের করেন। মামলাটি বিভিন্ন প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হলে দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ১৪ আগস্ট ফিজার সঙ্গে ১নং আসামি আসাদুজ্জামান মুন্নার ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই মুন্না পরকীয়ায় লিপ্ত হন। ফিজা এতে বাধা দিলে তাকে প্রায়শই মারধর করা হতো। তাদের দাম্পত্য জীবনে মোরসালিন নামে দুই বছর বয়সী একটি পুত্রসন্তান রয়েছে। সন্তান হওয়ার পরও মুন্না পরকীয়া চালিয়ে যান এবং ফিজা এ বিষয়ে অন্যান্য আসামিদের কাছে বিচার চাইলেও কোনো সুরাহা পাননি, বরং তাকেই গালিগালাজ করা হতো। পারিবারিক শালিসেও মুন্না সংশোধন হননি। হত্যার আনুমানিক সপ্তাহখানেক পূর্বেও ফিজাকে পরকীয়ায় বাধা দেওয়ায় অন্য আসামিদের ইন্ধনে মুন্না মারধর করেন এবং ঘটনাটি ভিকটিমের পরিবারকে জানালে তাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন।
ঘটনার দিন, ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ফিজা তার বাবার বাড়ি যাওয়ার কথা থাকলেও যাননি। পরবর্তীতে বিকাল ৪টা ৫০ মিনিটে আসামিদের বাড়ির পাশের এক ব্যক্তি ফিজার চাচাকে ফোন করে জানান যে, আসামিরা ফিজাকে হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর করে ঘরে আটকে রেখেছে। সংবাদ পেয়ে ফিজার পরিবারের সদস্যরা সন্ধ্যা আনুমানিক ৫টা ৩০ মিনিটে মুন্নার বাড়িতে গিয়ে তার রুমের জানালার গ্রিলের সাথে ফিজাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে।
মামলা রুজুর পর থেকেই আসামিদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে র্যাব-১১, সিপিসি-১, নারায়ণগঞ্জ ছায়া তদন্ত শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় তথ্যপ্রযুক্তি ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাবের একটি চৌকস দল ৪নং আসামি মোফাজ্জল হোসেন চুন্নুকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। চুন্নুর পিতার নাম মৃত তালেব হোসেন, সাং- নয়া মাটি (কুতুবপুর), থানা-ফতুল্লা, জেলা- নারায়ণগঞ্জ।
গ্রেফতারকৃত চুন্নুর বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় বিস্ফোরক আইন, হত্যাচেষ্টা, মাদক, চুরিসহ মোট ১৪টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে বলে র্যাব জানিয়েছে। তার বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তাকে নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।