নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে সম্প্রতি ‘ব্লিস বাইটস’ নামে একটি স্ন্যাকস কর্নারের শোরুম উদ্বোধন করা হয়েছে, যা নিয়ে শহরজুড়ে ব্যাপক আলোচনা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, প্রতিষ্ঠানটির মালিক ইয়াহইয়া আলম ওরফে উচ্ছ্বাস, যিনি সাবেক প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠ এবং শামীম ওসমানের পুত্র অয়ন ওসমানের বন্ধু হওয়ায়, কোনো প্রকার টেন্ডার ছাড়াই ক্লাবের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ব্যবসার সুযোগ পেয়েছেন।
ইয়াহইয়া আলম, যিনি ব্যবসায়ী মহলে উচ্ছ্বাস নামে পরিচিত, বিগত সরকারের শাসনামলে ওসমান পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের সুবাদে নারায়ণগঞ্জের মোবাইল মার্কেটসহ বিভিন্ন ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সূত্রমতে, তিনি কেবল অয়ন ওসমানেরই নন, আজমেরী ওসমান এবং শামীম ওসমানের শ্যালক তানভীর টিটুরও ঘনিষ্ঠ ছিলেন। ওসমান পরিবারের বিভিন্ন স্তরের সদস্যদের সাথে তার সুসম্পর্ক ছিল এবং এই প্রভাব কাজে লাগিয়ে তিনি ব্যবসা পরিচালনা করতেন বলে জানা যায়। কথিত আছে, ওসমান পরিবারের সাথে তার ব্যবসায়িক অংশীদারিত্বও ছিল।
গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ওসমান পরিবারের অনেক সদস্য বিদেশে চলে গেলেও তাদের ব্যবসায়িক অংশীদার ও ঘনিষ্ঠজনেরা নারায়ণগঞ্জেই সক্রিয় রয়েছেন বলে স্থানীয়রা মনে করছেন। উচ্ছ্বাসের ‘ব্লিস বাইটস’ এর শোরুম প্রাপ্তি এই ধারণাকে আরও জোরালো করেছে।
নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে বিনা টেন্ডারে এই শোরুম চালুর বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই নগরবাসীর মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে। অয়ন ওসমানের বন্ধুর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান কীভাবে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের মতো একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে এভাবে জায়গা পেল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা হেফাজতে ইসলামের সহ-সভাপতি মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান বলেন, “ওসমানরা পালিয়ে গেলেও তাদের দোসররা এখনো নারায়ণগঞ্জের সব সেক্টর নিয়ন্ত্রণ করছেন। নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে ব্লিস বাইটসের শোরুম এর একটি নমুনা মাত্র।”
মাওলানা ফেরদাউসের মতো আরও অনেকেই মনে করছেন, ওসমান পরিবারের অনুপস্থিতিতেও তাদের সহযোগীরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিজেদের আধিপত্য বজায় রেখেছে। নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের এই ঘটনা সেই আধিপত্যেরই প্রতিফলন বলে তারা মনে করেন।
সাধারণ নগরবাসী ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন অবিলম্বে নারায়ণগঞ্জ ক্লাব থেকে ‘ব্লিস বাইটস’-এর শোরুম সরিয়ে ক্লাবটিকে ওসমান পরিবারের প্রভাবমুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন। তারা মনে করছেন, ক্লাবের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের অনিয়ম মেনে নেওয়া যায় না এবং ক্লাবের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনা জরুরি। এই ঘটনা নারায়ণগঞ্জে পূর্ববর্তী প্রভাবশালী গোষ্ঠীর চলমান আধিপত্য এবং সুশাসনের অভাব নিয়ে নতুন করে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।