নারায়ণগঞ্জে গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি সেলিম মাহমুদ এর মুক্তি এবং তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আজ বিকাল ৫টায় নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সহ-সভাপতি হাসনাত কবির এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাসদ (বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল) নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সদস্য-সচিব আবু নাঈম খান বিপ্লব, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফেডারেশন জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এস.এম কাদির, গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন নারায়ণগঞ্জ জেলা সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শরীফ, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কমিটির সভাপতি রুহুল আমিন সোহাগ রূপগঞ্জ উপজেলা কমিটির সভাপতি সাহল এবং কাঁচপুর শিল্পাঞ্চল শাখার সভাপতি আনোয়ার খান।
বক্তারা জানান, গত রাত সাড়ে ১টায় সেলিম মাহমুদকে তার ফতুল্লার বাসা থেকে নিরাপত্তা বাহিনী তুলে নিয়ে যায়। তাকে গ্রেফতারের সময় তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হয় এবং ৯ম শ্রেণিতে পড়ুয়া তার ছেলেকে থাপ্পড় ও লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়। তার বিরুদ্ধে কোনও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকলেও তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং রবিনটেক্স কারখানার পূর্বের দুটি মামলার সঙ্গে জড়িত করা হয়, যার মধ্যে একটি ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের অধীন দায়ের করা হয়েছে। বক্তারা প্রশ্ন তোলেন, যারা সর্বদা মুজিববাদের বিরোধিতা করেন, তারাই আবার মুজিব প্রণীত এই কঠোর আইন ব্যবহার করছেন কেন?
বক্তারা বলেন, রবিনটেক্স কারখানার শ্রমিকরা যখন ইউনিয়ন গঠন ও নিবন্ধনের চেষ্টা শুরু করে, তখন থেকেই মালিকপক্ষ পরিকল্পিতভাবে শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়ার অধিকার কেড়ে নিতে চায়। ইউনিয়ন নিবন্ধনের মামলা আদালতে চলমান থাকা অবস্থায় ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদককে গত চার মাস ধরে কারখানায় প্রবেশ করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। মালিকপক্ষ শ্রমিকদের বিভ্রান্ত করে আদালতের প্রক্রিয়াকে ঠেকানোর চেষ্টা করছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি করছে। ইতোমধ্যে, ইউনিয়নের সভাপতি সীমা আক্তার সহ ২২ জন শ্রমিককে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সেলিম মাহমুদ এই নির্যাতিত শ্রমিকদের আইনি সহায়তা দিচ্ছিলেন এবং ইউনিয়নের কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার জন্য সংগ্রাম করছিলেন। রবিনটেক্সের কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের দমন-পীড়ন চালিয়ে তাদের সংগঠন ভেঙে দিতে চায়, আর এজন্যই সেলিম মাহমুদকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে বক্তারা অভিযোগ করেন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, বর্তমান সরকারের দায়িত্ব ছিল গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু তারা বিগত হাসিনা সরকারের মতোই শ্রমিকদের কণ্ঠ রোধ করতে গ্রেফতার ও মিথ্যা মামলার পথ বেছে নিয়েছে। তারা সতর্ক করে দিয়ে বলেন, মালিকপক্ষের শোষণের স্বার্থ রক্ষায় সরকার যদি শ্রমিক নেতাদের গ্রেফতার ও নির্যাতন চালায়, তবে এর কঠিন প্রতিক্রিয়া হবে।
সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল নারায়ণগঞ্জ শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।