শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৪:৪১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :

বিশেষ সহায়তার তালিকায় ব্যাংকার, ইউপি সদস্য, চাকরিজীবী ও নেতাকর্মীদের নাম

সংবাদ দাতার নাম
  • প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ৪ জুন, ২০২০
  • ২৭৬ 🪪

করোনা পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহায়তার নগদ আড়াই হাজার টাকার তালিকায় ইউপি সদস্য ও দলীয় ১২ জনের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার পাঁচগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে শোকজ করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। তবে এখনও সরকারি চাকরিজীবী, বিভিন্ন ভাতাভোগী, প্রবাসী ও উচ্চবিত্তদের নাম রয়ে গেছে তালিকায়। এসব বিষয়ে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

যে ১২ জনের বিষয়ে শোকজ করা হয়েছে সেই নম্বরগুলো হলো- ২২১, ২২৩, ২২৪, ২৩১, ২৩৪, ২৩৮, ২৩৯, ২৪৭, ২৪৮, ২৪৯, ২৫০ ও ২৫২।

২২১ নম্বরের ফুয়াদ আল মতিনকে বেকার দেখানো হয়েছে। অথচ তিনি ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক, যার ভাই ফয়সল আল মতিন অস্ট্রেলিয়া থাকেন এবং আর এক ভাই ফরহাদ আল মতিন চাটখিল মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ। তবে ২৩৪ নাম্বারে তার মা সাবেক মেম্বার পারভীন আক্তারকে গৃহিণী দেখানো হয়েছে। তিনি চেয়ারম্যানকে তার এবং তার মায়ের নাম বাদ দেওয়ার জন্য বলেছেন বলে জানিয়েছেন। ২২৩ নম্বরের মো. রেজাউল করিমকে বেকার দেখানো হয়েছে। অথচ তার বাবা ১ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. শাহজাহান। ২২৫ নম্বরে তার নাম এবং ২২৩ নম্বরে তার ছেলে রেজাউল করিম এর নাম থাকা প্রসঙ্গে মো. শাহজাহান জানান, তারা কেউ জানেন না। তিনি চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহমুদ হোসেন তরুণকে বললে তিনি জানিয়েছেন, নামগুলো ক্যান্সেল করানো হয়েছে।

২২৪ নম্বরের খোরশেদ আলমকে দোকান কর্মচারী দেখানো হয়েছে। অথচ তিনি ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য নাসিমা বেগম এর স্বামী। ২৩১ নম্বরের মেহেদী হাছানকে বেকার দেখানো হলেও তার বাবা ১ নং ওয়ার্ডের সদস্য এবং প্যানেল চেয়ারম্যান ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি মোস্তফা কামাল। ২৩৮ নম্বরের নাসির উদ্দিনকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী দেখানো হলেও তিনি ২ নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. হানিফের ছেলে, যার ৫ ভাই সৌদি আরব থাকেন এবং একতলা পাকা ভবন রয়েছে। ২৩৯ নম্বরের কুন্তল কুমার ঘোষকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী দেখানো হয়েছে। তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বরত আছেন। ২৪৭ নম্বরের তানিয়া করিমকে গৃহিণী দেখানো হয়। তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক একেএম সালেহ উদ্দিন (রাহেল) এর স্ত্রী। ২৪৮ নম্বরের শওকত আলীকে কৃষক দেখানো হলেও, তিনি ৭ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি পদে রয়েছেন। ২৪৯ নম্বরের কামাল হোসেনকে চাকুরিজীবী দেখানো হলেও তিনি চাটখিল সোনালী ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা এবং পাঁচগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে রয়েছেন। ২৫০ নম্বরের জুয়েল পাটোয়ারি ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নং ওয়ার্ডের মেম্বার পদে রয়েছেন। ২৫২ নম্বরের দেলোয়ার হোসেনের পেশা কৃষি দেখানো হয়েছে। তিনি ৫ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

তবে, তালিকায় ২৫৮ নম্বরে হোসেনপুর সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. বোরহান, ২৩৫ নম্বরে রয়েছে আবু তোরাব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক আনোয়ার হোসেন, ২২৫ নম্বরে ১ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. শাহজাহান, ২৩২ নম্বরে ১ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ আলম, ১৭৫ নম্বরে তার পুত্রবধূ শিল্পী বেগম, ১৯১ নম্বরে তার ছেলে মো. নোমান, ৭ নম্বরে পাকা ভবনের মালিক ইউনিয়ন যুবলীগ কর্মী আরিফ হোসেন সাইফুল, ২২২ নম্বরে তার ভাই মাইন উদ্দিন, ২৫১ নম্বরে আওয়ামী লীগ থেকে চেয়ারম্যান মনোনয়ন চাওয়া মো. মেজবাহ যার ভাই জুয়েল আমেরিকা প্রবাসী, ১২৪ নম্বরে ইরাক প্রবাসী স্বপন মজুমদারের স্ত্রী শিপ্রা মজুমদার যার ৫ নং ওয়ার্ডে পাকা ভবন, ১৩৩ নম্বরে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জগন্নাথ চন্দ্র পাল, ২৫৯ নাম্বারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা অফিসে মাস্টাররোলে চাকরি করা জাকিরের বাড়ি অন্য ইউনিয়নে (জয়াগ), ২১৫ নম্বরে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার বাড়িতে কনস্ট্রাকশনে কাজ করা লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার শান্তিনগরের নাজমুল হোসেন, ১০৮ নম্বরে মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম, ১৩৪ নম্বরে মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সোবহানের মৃত্যুর পর মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাওয়া ছেলে রুবেল হোসেন, ৫৬ নম্বরে চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহমুদ হোসেন তরুণের লেখক সাজ্জাদ মনসুরের স্ত্রী শাহনাজ আক্তার, ৭৯ নম্বরে মাতৃত্বকালীন ভাতা ভোগকারী কামরুন্নাহার ঝুমু, ২৫৩ নম্বরে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য পাকা বিল্ডিংয়ের মালিক সিরাজুল ইসলাম, ১৯৮ নম্বরে রোকসানা আক্তার যার ৫ ছেলে প্রবাসী, ২৩৩ নম্বরে ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহজাহান পুলিশের বাড়িতে কাজ করার সুবাধে দিনাজপুরের অধিবাধী সুজন চন্দ্র, ২০৫ নম্বরে কুমিল্লা জেলার নূর মোহাম্মদ, ১২৫ নম্বরে ৫ নং ওয়ার্ডের ইরাক প্রবাসী দিলীপ চন্দ্র তরফদারের স্ত্রী বিন্দু রানী তরফদার যার জেলা শহর মাইজদীতে ভবন রয়েছে, ১৯৬ নম্বরে প্রবাসী আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী দোতলা ভবনের মালিক আল্পনা, ১১ নম্বরে দোতলা ভবনের মালিক আবদুর রহমান ও ১১৪ নম্বরে পাকা ভবনের মালিক মাহফুজের নাম উল্লেখ করে কোনও শোকজ করা হয়নি।

এছাড়া ১৪২, ১৪৫, ১৫৩, ১৭৮, ১৮০, ১৮৬, ১৮৯, ১৯২, ২০০, ২০৩, ২১৩, ২১৮ ও ২৫৪ নম্বরে এক ব্যক্তির নাম ও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ও মোবাইল নম্বর অন্য ব্যক্তির নামে ব্যবহার করা হয়েছে এবং একজনের পরিচয়পত্র নম্বর ও অন্যজনের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে এগুলোর বিষয়ে কোনও জবাব চাওয়া হয়নি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ দিদারুল আলম বলেন, ‘আমার কাছে তখন ১২ জনের অর্ন্তভুক্তির বিষয়ে অভিযোগ আসায় তাদের বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে শোকজ করা হয়েছে। তিনি তার জবাব দিয়েছেন। আমি তা জেলা প্রশাসন অফিসে প্রেরণ করেছি। বাকিগুলোর বিষয়েও পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’

পাঁচগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহমুদ হোসেন তরুণ বলেন, ‘১২ জনের অর্ন্তভুক্তির বিষয়ে জবাব দিয়েছি। এই নামগুলোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেবে। এই নামগুলির ব্যাখা এখনও চাওয়া হয়নি। পুরা তালিকা আবার সংযোজন বিয়োজন হবে। ৮ লাখ পরিবর্তন পরিবর্ধনের জন্য সেন্ট্রালি একটা কমিটি করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এই পরিবর্তনের সুযোগটা মিনিস্ট্রি হয়ে ডিসি হয়ে আমাদের কাছে আসবে। এগুলো পরিবর্তনের জন্য মেসেজটা আসার অপেক্ষায় আছি আর কী।’

জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইশরাত সাদমীন বলেন, জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়েছে। তিনি বিষয়টি দেখছেন বলে জানিয়েছেন।

এ বিভাগের আরো সংবাদ
©2020 All rights reserved Daily Narayanganj
Design by: SHAMIR IT
themesba-lates1749691102