রাসেল নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লা থানাধীন কাশীপুর হাটখোলা এলাকার ক্রোনী এ্যাপারেলস নামক প্রতিষ্ঠানের সুইং সেকশনের শ্রমিক। বেতন চাওয়ার অপরাধে হাতের রগ কেঁটে তাকে নির্যাতন করেছে মালিকের ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা। হাসপাতালে ৫ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে গত বৃহস্পতিবার বাড়িতে ফিরেছে আহত এ-ই শ্রমিক।
বৃহস্পতিবার(৩০ মে) সরেজমিন কাশীপুর হাটখোলা এলাকার লোহা ব্যবসায়ী আমান’র বাড়িতে গিয়ে এমন দৃশ্যই দেখা গেছে।রাসেল দিনাজপুর জেলার মৃত আব্দুর রহমান’র পুত্র। পিতা মারা যাবার পরে জীবিকার সন্ধানে মাকে নিয়ে চলে আসেন নারায়ণগঞ্জে। গত ৫ বছর ধরে সে ক্রোনী এ্যাপারেলসে কাজ করছেন।
এ. এইচ. এম. আসলাম সানী’র মালিকানাধীন ও-ই প্রতিষ্ঠানটিতে গত ৬ মাস ধরে বকেয়া বেতন পরিশোধ নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষ চলে আসছে। কয়েক মাসের বেতন ফেলে রেখেই অনেক শ্রমিক চলে গেছেন অন্যত্র। অন্যদিকে গত বুধবার (২৯ মে) আসলাম সানীকে বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ করে শ্রম মন্ত্রণালয়।
গত শনিবার (২৫ মে) ক্রোনী এ্যাপারেলসে কয়েক মাসের বকেয়া বেতন চাওয়ায় রাসেল নামের ও-ই শ্রমিকের ডান হাতের রগ কেঁটে দেয় মালিকের পালিত সন্ত্রাসীরা। লোমহর্ষক ঘটনার ছয় দিন পেরিয়ে গেলেও শ্রমিকের পক্ষে কোনো অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। তার পাশে এসে দাঁড়ায়নি কোন শ্রমিক নেতা, এমনকি খোদ শ্রমিকরাও। নীরবে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে কয়েকজন সাংবাদিকও মোটা অঙ্কের উৎকোচ নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।শ্রমিকরা জানায়- গত শনিবার (১৫ মে) সকালে কয়েক মাসের বকেয়া বেতনের দাবীতে শ্রমিকরা ক্রোনী এ্যাপারেলস এর ভেতরে আন্দোলন শুরু করে। এসময় তারা বেতন পরিশোধের দাবীতে নানা ধরণের স্লোগান দিতে থাকে। এক পর্যায়ে কোম্পানীর ভাড়াটে সন্ত্রাসী রনি ও আরিফ সহ কয়েকজন ৩ জন শ্রমিককে জোর করে টেনে-হিঁচড়ে একটি অটোরিক্সায় তুলে নিয়ে যায়। পরে তাদেরকে রনি’র বাগানবাড়িতে নিয়ে আসে। সেখানে তাদের উপর চালানো হয় অমানবিক নির্যাতন। একপর্যায়ে রাসেল নামের এক শ্রমিকের হাতের রগ কেঁটে দেয় সন্ত্রাসীরা।
এ-ই খবর পেয়ে শ্রমিকরা এসে রনি’র বাগানবাড়ির সামনে এসে জড়ো হয়। পরে আহত শ্রমিককে উদ্ধার করে তাকে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়ায় তাকে পরে পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়।
রাসেল হাটখোলা এলাকায় লোহা ব্যবসায়ী আমান উল্লাহ’র বাড়িতে ভাড়া থাকতো। এ বিষয়ে বাড়িওয়ালা বলেন- শ্রমিকের নিরাপত্তার স্বার্থে এ বিষয়ে বেশি ঘাটাঘাটি না করাই ভালো। রাসেল এখনও বিয়ে করেনি।তবে এ ব্যাপারে শ্রমিকের পাশে থাকবেন বলে ঘোষণা দিয়েও কয়েকদিনে কোন পাত্তা মেলেনি ইউনাইটেড ফেডারেশন অব গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স এর নেতা শাহাদাত হোসেন সেন্টু’র। তিনি বলেন- ক্রোনী গ্রুপের এজিএম সাগর সাহেবের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। উনি বলেছেন ও-ই শ্রমিকের বকেয়া বেতন ও চিকিৎসার যাবতীয় খরচ দেয়া হবে। আমরা নিয়মিত যোগাযোগ রাখবো
তবে এ বিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আজম মিয়া জানান- এ বিষয়ে আমাদের কাছে কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ক্রোনী এ্যাপারেলস এর মালিক আসলাম সানী’র (০১৭১১৫৬১৪১৯) সঙ্গে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।