জাতীয় পার্টির (একাংশ) চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ বলেছেন, আজকে শনিবার (৯ই মার্চ) ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিশনে সম্মেলন না হলে জাতীয় পার্টি হারিয়ে যেতো । তিনি আরও বলেন, হাজার হাজার নেতাকর্মীকে আমরা হারিয়ে ফেলতাম। দেশের মানুষ জাতীয় পার্টির দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতো। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেই তার প্রতিফলন ঘটেছে।
শনিবার (৯ মার্চ) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিশনে জাপার একাংশের এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের মধ্য দিয়ে জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি প্রথমবারের ভাঙনের মুখে পড়লো। সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রতিষ্ঠিত এই দলটি এ নিয়ে অন্তত ছয় বার বিভক্ত হলো। জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন অংশে রওশন এরশাদ চিফ প্যাট্রনের দায়িত্বে ছিলেন।
রওশন এরশাদ সম্মেলন প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন, আজ আমার রাজনৈতিক জীবনের এক ঐতিহাসিক দিন। আমার গড়া প্রাণপ্রিয় সংগঠন জাতীয় পার্টি— এ রকম একটি ঐতিহাসিক সম্মেলন আয়োজন করতে পেরেছে দেখে, আমার হৃদয় কানায় কানায় ভরে গেছে। এই সম্মেলন আয়োজনের জন্য জাতীয় পার্টির সব স্তরের নেতাকর্মীকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
রওশন এরশাদ বলেন, এরশাদ এদেশে যে নতুন ধারার ইতিবাচক রাজনীতির প্রবর্তন করে ছিলেন, সেই রাজনীতি হারিয়ে যেতে বসেছিল। আজ এই দশম সম্মেলনের মাধ্যমে পল্লীবন্ধু এরশাদের নীতি-আদর্শ এবং উন্নয়ন-সমৃদ্ধি ও সংস্কারের রাজনীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। জনগণের মনে আবার আমরা বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি এই সম্মেলনের মাধ্যমে।
‘আমরা অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করে এখনও টিকে আছি। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের পর যখন একটু ঘুরে দাঁড়ালাম, তখন আমাদের দলীয় প্রতীক লাঙ্গল নিজেদের আয়ত্তে রাখার জন্য আদালতে দাঁড়াতে হয়েছিল। আদালতের সুবিচারে পল্লীবন্ধু এরশাদ এবং আমি রওশন এরশাদ লাঙ্গল প্রতীক জাতীয় পার্টির জন্য বরাদ্দ পেয়েছিলাম। সেই লাঙ্গল প্রতীক এখনও আমাদের জাতীয় পার্টির অনুকূলে আছে এবং আগামীতেও থাকবে, ইনশাআল্লাহ।
তিনি বলেন, এরশাদের জাতীয় পার্টিতে কোনও বিভেদ নেই। আমরা এক আছি, ঐক্যবদ্ধ আছি এবং থাকবো। অতীতে যারা পার্টি ছেড়ে গেছেন, তারা কেউ পল্লীবন্ধু এরশাদের নীতি আদর্শ নিয়ে যাননি। এমনকি তারা পল্লীবন্ধুর ছবিও সঙ্গে নেননি। তাই জাতীয় পার্টি কখনও ভেঙেছে, তা আমি মনে করি না।’
তিনি জানান, পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে পার্টির ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত না রেখে বিকেন্দ্রীকরণ করার প্রস্তাব রেখেছেন।
সাবেক এমপি সাদ এরশাদ বলেন, ‘আজকের এই দিনটি আমার জীবনে একটি স্মরণীয় দিন হয়ে থাকবে। আজ এমন একটি সম্মেলনে আপনাদের সামনে দুটো কথা বলার সুযোগ পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করছি। আজ আমার অনেক বেশি ভালো লাগছে। আমার আব্বুর রেখে যাওয়া তার প্রিয় সংগঠন জাতীয় পার্টিকে আবারও সুসংগঠিত করার অঙ্গীকার নিয়ে আপনাদের সামনে দাঁড়াতে পেরেছি।
সম্মেলন ঘিরে রমনা এলাকা নানা ব্যানারে, ফেস্টুনে সাজানো হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের তরফে। অতিরিক্ত সিসি ক্যামেরা রয়েছে সম্মেলনস্থলে ও এর আশেপাশে।
এসময় রওশন এরশাদ এর সভাপতিত্বে ও কাজী মামুনুর রশীদ এর সঞ্চালনায় অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকি, সাবেক মন্ত্রী শেখ শহিদুল ইসলাম, কাজী ফিরোজ রশিদ, নাজিম উদ্দিন আজাদ, সাবেক এমপি, এরশাদে এর সুযোগ্য পুত্র শাদ এরশাদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য, গোলাম সারওয়ার মিলন, সাইদুর রহমান টেপা, সাবেক এমপি আবুল কাসেম, মোঃ জাফর ইকবাল, ডাঃ আর কে এম, নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সাবেক সদস্য সচিব মোঃ আক্রাম আলী শাহিন সহ দলের অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ। উপর দিকে সম্মেলন কে ঘিড়ে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দিপনার মধ্যে দিয়ে এ সস্মেলন সম্পুর্ন হয়। কাউন্সিলর ও ডেলিগেডের পুর্ন সম্থর্ন পেয়ে সাবেক ফাষ্টলেডি রওশন এরশাদ চেয়ারম্যান ও কাজী মামুনুর রশীদ মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছেন।