নারায়ণগঞ্জ নগরীর প্রানকেন্দ্র বঙ্গবন্ধু সড়কের নিতাইগঞ্জ থেকে চাষাঢ়া পর্যন্ত দুই কিলোমিটার শহর অংশে প্রতিদিন ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যানজটে দুর্ভোগে নাজেহাল নগরীর বাসিন্দারা। প্রতিদিনের রুটিন এটি।
যানজট নিরসনের দায়িত্বে নিয়োজিত ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, লিংক রোডের রাইফেল ক্লাব প্রান্তে সড়ক ও জনপথের (সওজ) ভাঙা রাস্তা, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরোনো সড়কের সরকারি মহিলা কলেজের সামনে অবৈধ বাস কাউন্টার, সিএনজি,ব্যাটারী চালিত অটোরিকশার কারণে সড়কে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এ ছাড়াও চাষাঢ়া গোলচত্বরের চারপাশে সিএনজি চালিত অটোরিকশা (সিএনজি) ও নিষিদ্ধঘোষিত টু স্ট্রোক ইঞ্জিনের বেবিট্যাক্সি স্ট্যান্ড,ব্যাটারী চালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ড গড়ে ওঠায় যানজট ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।
নিতাইগঞ্জ থেকে চাষাঢ়ায় আসা মালবাহী এক চালক বলেন, নিতাইগঞ্জ থেকে চাষাঢ়ায় আসতে প্রায় দুই ঘণ্টা যানজটে আটকা পড়ে আছি। থেমে থেমে গাড়ি চলছে। যানজটে আটকা পড়ে লোকসান হচ্ছে মারাত্মক।
নারায়ণগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের হিসাব অনুযায়ী, চাষাঢ়া গোলচত্বর দিয়ে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড এবং ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরোনো সড়কে মিনিটে ২০/২৫টি গাড়ি চলাচল হয়। কিন্তু রাস্তা ভাঙা ও গর্তে পানি জমে থাকায় ভারী যানবাহন গর্ত এড়িয়ে চলতে গিয়ে ধীরগতিতে চলতে বাধ্য হচ্ছে। এসব কারণে চার রাস্তার মোড়ে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এটা বিস্তৃত হয়ে যাচ্ছে শহরের অন্যান্য সড়কগুলোতে সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ যানজটের।
নারায়ণগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক আব্দুল করিম বলেন বর্ষার কারণে রাস্তার অনেক জায়গায় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্তে আটকে যাচ্ছে ভারী যানবাহন। সওজের উদাসীনতার কারণে রাস্তায় যানজট বিস্তৃত হয়ে ভয়াবহ হচ্ছে।
অপর এক তথ্য মতে জানা গেছে,
নারায়ণগঞ্জে প্রধান সড়কগুলোর মোড়ে মোড়ে গড়ে উঠেছে অবৈধ নানান ধরনের গাড়ির স্ট্যান্ড। এর নেপথ্যে কাজ করছে কিছু স্বার্থান্বেষী ট্রাফিক পুলিশ এবং নামধারী সাংবাদিক। নগরবাসী মনে করছে শহরের যানযট নিরসন প্রধান অন্তরায় হচ্ছে এসকল সিন্ডিকেট ও চাঁদাবাজ। কিছু সংখ্যক স্বার্থান্বের ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তার যোগাসাজসে এসকল সিন্ডিকেট চক্র পরিচালিত হচ্ছে। যার ফলে ভয়াবহ যানজট ও দূর্ভোগের কবলে পরে নগরবাসী আজ নাজেহাল।
সরেজমিনে দেখা গেছে, অবৈধভাবে নগরের নিতাইগঞ্জের মোড়ে ও ২ নম্বর রেলগেটে অটোরিকশা ও ইজিবাইক স্ট্যান্ড, ডায়মন্ড হলের সামনে ইজিবাইক স্ট্যান্ড, ফজর আলী ট্রেড সেন্টারের সামনে সিএনজি অটোরিকশা ও ইজিবাইক স্ট্যান্ড, ডিআইটি গুলশান হলের সামনে অটোরিকশার স্ট্যান্ড, মর্গ্যান স্কুলের সামনে ও গলাচিপা মোড়ে অটোরিকশা ও ইজিবাইক স্ট্যান্ড, ১ নম্বর রেলগেটে বাস ও ইজিবাইক স্ট্যান্ড, কালীরবাজারে ইজিবাইক ও অটোরিকশা স্ট্যান্ড, চাষাঢ়া সোনালী ব্যাংকের সামনে সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ড, খাঁজা মার্কেটের পেছনে লেগুনা স্ট্যান্ড, চাষাঢ়া চত্বর সুগন্ধা বেকারির সামনে লেগুনা ও অটোরিকশা স্ট্যান্ড, শহিদ মিনারের সামনে ও তার পাশে সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ড। এছাড়াও মৌমিতার সারা চাষাড়া জুড়ে বিরচন তো আছেই।
এছাড়াও রাইফেলস ক্লাবের সামনে লেগুনা, অটোরিকশা ও ইজিবাইক স্ট্যান্ড, সরকারি মহিলা কলেজের সামনে সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ড, চাষাঢ়া রেলস্টেশনের সামনে সিএনজি ও অটোরিকশা স্ট্যান্ড, খানপুর মেট্রো হলের সামনে বাস ও অটোরিকশার স্ট্যান্ড। অবৈধ এসব স্ট্যান্ডকে কেন্দ্র করে বেড়েই চলেছে অবৈধ যান অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত রিকশা। এতে গড়ে উঠেছে চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট। সেই সঙ্গে শহরে বেড়েছে যানজট। অবৈধ স্ট্যান্ডগুলোতে চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের হোতা হিসেবে কাজ করছে কিছু ট্রাফিক পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও বেকারের দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক সদস্য, রাজনৈতিক নেতা ও নামধারী সাংবাদিক। প্রতিদিন এসব চক্র হাজার হাজার টাকা চাঁদা তুলছে এসকল পরিবহন সেক্টর থেকে। এ চাঁদার টাকায় এদেট অনেকেই বাড়ি-গাড়ি সহ আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বহুবার নিষিদ্ধ এসব যান বন্ধ করার কথা বলা হলেও বাস্তবে কোনো ধরনের ব্যবস্হা নেওয়া হচ্ছে না।দেশের শীর্ষস্থানীয় বহু পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর কয়েক দিন প্রশাসন সাময়িক সময়ের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও দুই-তিন দিন পর আবার সেই রূপ ও পুরাতন অবস্হায় ফিরে আসে।
অন্যদিকে এ সুযোগে দিন দিন এসব অবৈধ যানের সংখ্যা নজীরবিহীনভাবে বেড়েই চলছে শহরে। ফলে বাড়ছে দুর্ঘটনা, প্রাণহানির সংখ্যা এবং সর্বপরি চাঁদাবাজদের সিন্ডিকেট। একটি গোপন ও বিধ্বস্ত সূত্র জানায়, এই সব অবৈধ স্ট্যান্ডগুলোতে ট্রাফিক পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নামধারী সাংবাদিক সহ রেকার ইনচার্জ এমনকি ট্রাফিক পুলিশ সদস্যকে ব্যাটারী চালিত অটোরিকশার জন্য প্রতিদিন ঘুনতে ৬০/৭০ টাকা হারে মাসোহারা দিতে হয়। ট্রাফিক পুলিশ যানযট নিরসন তো দুরের কথা সকাল থেকে দুপর ৩টা পর্যন্ত চলে ডাম্পিং এর নামে মাসোয়ারা। তবে এসব মাসোয়ারা গুনতে হয় তাদের যারা ওই সিন্ডিকেট চক্রের অন্তর্ভুক্ত নয়।রেকারে কাজ রেখে প্রায় সকল ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা ব্যাটারী চালিত অটোরিকশা নিয়ে দিনের অর্ধেক অংশ ব্যস্ত সময় কাটায়।
অন্যদিকে, চাষাড়া, রাইফেলস ক্লাব, নারায়ণগঞ্জ মহিলা কলেজ, মেট্রো হল, মর্গ্যান স্কুল, নিতাইগঞ্জ, ২ নম্বর রেলগেট ও ফলপট্টিতেও আলাদা আলাদা করে সকাল ৮টায় ও দুপুর ১২টায় ২০ টাকা করে মোট ৪০ টাকা দিতে হয় পুলিশ সদস্যকে এবং এই অটোরিকশাগুলোকে আবার শহরে দায়িত্বপ্রাপ্ত তিন রেকার কর্মকর্তাকে মাসিক ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা দিতে হয়। এসব অবৈধ স্ট্যান্ডের গাড়িচালকরা বলছেন, ‘আমাদের প্রতি মাসে এখানে পুলিশকে মাসিক ১৫শ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা দিয়ে গাড়ি রাখতে হয়। যে মাসিক টাকা না দেয় তাদেরই পুলিশ ধরে নিয়ে যায় এবং বেকারের নামে জরিমানা করে। নারায়ণগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বরত টিআই এ কে করিম বলেন, আমরা যানজট নির্মূল করতে পারব না, চেষ্টা করছি যানজট নিয়ন্ত্রণ করতে। বিভিন্ন অবৈধ স্ট্যান্ডে গাড়ি থেকে ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তারা টাকা তুলছেন—এমন অভিযোগের ব্যাপারে তিনি কোনো ধরনের সদুত্তর দিতে ব্যর্থ হন।