নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে ইচ্ছাকৃতভাবে আগুন লাগানোর ঘটনায় শামীম ওসমান, সেলিম ওসমান ও তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ক্লাবের সুপারভাইজার রঞ্জন কুমার রায় সুমনের দায়ের করা মামলায় অভিযোগ উঠেছে, ক্লাবের দুর্নীতি ও লুটপাটের প্রমাণ ধ্বংস করতে এই ঘটনা ঘটানো হয়।
শুক্রবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ দায়ের করা মামলায় নামযুক্ত ৪৬ জন ও অজ্ঞাতনামা আরও দেড়শ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, ২০০৮ থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সেলিম ওসমান (সাবেক এমপি ও ক্লাব সভাপতি), তার ভাই শামীম ওসমান (এমপি) ও শামীমের শ্যালক তানভীর আহমেদ টিটু (ক্লাবের সাবেক সভাপতি) ক্লাবের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে স্বেচ্ছাচারী আচরণ করেন। তারা ক্লাবের বহুতল ভবন নির্মাণসহ বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতি, তহবিল তসরুপ ও অনিয়মের প্রমাণ গোপন করতে ৫ আগস্ট রাতে ক্লাবে আগুন লাগানোর পরিকল্পনা করেন।
ঘটনার দিন রাত আনুমানিক সাড়ে আটটায় শামীম ওসমানের নেতৃত্বে আসামিরা ক্লাবে গুলিবর্ষণ ও ককটেল বিস্ফোরণ করে। এ সময় তারা অফিসের সিন্দুক থেকে ৬ লাখ টাকা লুট করে এবং অফিস কক্ষ, গেস্ট হাউস, লাইব্রেরি ও নামাজ ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে ক্লাবের ব্যাংক হিসাব, রেকর্ডপত্র, ইলেকট্রনিক সরঞ্জামসহ প্রায় ১০ কোটি টাকার সম্পদ পুড়ে যায়।
মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, ২ আগস্ট শামীম-সেলিম ওসমান ও তাদের সহযোগীরা ক্লাবের গেস্ট হাউসে গোপন বৈঠক করে এই পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে। তাদের লক্ষ্য ছিল ক্লাবের দুর্নীতির দালিলিক প্রমাণ ধ্বংস করা।
মামলার প্রধান আসামিদের মধ্যে রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান (৭০), তার ভাই, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান (৬৪)।
অন্যান্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন তানভীর আহমেদ টিটু (৫১), যিনি ফতুল্লার জামতলার হাজী হায়দার আলী রোডের ১ নিউ চাষাঢ়ার সাইফুদিন আহমেদের ছেলে; প্রবীণ খবির আহমেদ (৭৮), যিনি নারায়ণগঞ্জ ২নং বাবুরাইলের ৯৬ নং বাড়ির মৃত ইয়াকুব আলীর পুত্র; আসিফ হাসান মাহমুদ মানু (৫৪), যার ঠিকানা ফতুল্লার উত্তর চাষাঢ়ার ৪২ নং বাড়ি এবং যিনি মৃত আসফাক হাসান মাহমুদের ছেলে; এবং শাহ্ নিজাম (৫৬), যিনি ফতুল্লার উত্তর চাষাঢ়ার মৃত নুর উদ্দিন সরকারের ছেলে।
মামলায় আরও আসামি করা হয়েছে ফয়েজউদ্দিন আহমেদ লাভলুকে (৬৫), যার বাড়ি ফতুল্লার মাসদাইরে এবং যিনি মৃত মহিউদ্দিন আহমেদ খোকার ছেলে; মোঃ আরমান হোসেন জুয়েলকে (৬২), যিনি ফতুল্লার ভূইয়ার বাগ এলাকার ১২/৫ নং দাঙ্গা হাঙ্গামা করিয়া বাড়ির মৃত আসাদ আলীর পুত্র; লিয়াকত হোসেন খোকাকে (৬২), যিনি নারায়ণগঞ্জ আমলাপাড়ার ৫৮ কেবি সাহা সড়কের মৃত আইউব আলীর ছেলে; এবং আজমেরী ওসমানকে (৪৯), যার ঠিকানা ফতুল্লার উত্তর চাষাঢ়ার হীরা মহল এবং যিনি প্রয়াত একেএম নাসিম ওসমানের পুত্র।
এই মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিদের তালিকায় আরও রয়েছেন জাকিরুল আলম হেলাল (৫৮), যিনি ফতুল্লার উত্তর চাষাঢ়ার ৬৯/২ নং বাড়ির মৃত আব্দুল আওয়াল চুরি করে করার ভূঁইয়ার ছেলে; মোঃ শাহদাৎ হোসেন ভূঁইয়া সাজনু (৫৫), যিনি সিদ্ধিরগঞ্জের কলাবাগ এলাকার মৃত জালাসউদ্দিন আহমেদের ছেলে; এবং চন্দন শীল (৬৩), যার ঠিকানা নারায়ণগঞ্জ নতুন চাষাড়া (হামিদ ভিলা) এবং যিনি রাজন্দ্র নারায়ণ শীলের পুত্র। এছাড়াও আসামি করা হয়েছে জালাল উদ্দিন আহমেদকে (৭২), যিনি নারায়ণগঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জের কলাবাগ এলাকার সোহার উদ্দিন (সোনামিয়া) এর ছেলে; খোকন সাহাকে (৫৭), যিনি নারায়ণগঞ্জ গোয়ালপাড়ার ডিএন রোডের মৃত দীজেন্দ্র সাহার ছেলে; মোঃ হাসান ফেরদৌস জুয়েলকে (৫৬), যিনি নারায়ণগঞ্জ আল্লামা ইকবাল রোডের (রাজ্জাক টাওয়ার) ২৩ নং বাড়ির মৃত ফোরকান মোল্লার ছেলে; লিটন সাহাকে (৫৫) এবং বিপ্লব সাহা রামুকে (৪৮), উভয়েরই ঠিকানা নারায়ণগঞ্জ টানবাজারের টাওয়ার) আলহাজ্ব সাহাবুদ্দিন মিয়ার ছেলে; শংকর কুমার রায় (৬১), যার ঠিকানা নারায়ণগঞ্জ চাষাঢ়ার ২০৭/৩ বঙ্গবন্ধু সড়ক এবং যিনি শীতল রায়ের ছেলে; ফাইজুল ইসলাম (৫৫), যিনি ফতুল্লার কাইমপুরের মৃত আব্দুল মজিদের ছেলে; এবং মোহাম্মদ মহসিন মিয়া (৫২), যার বাড়ি বন্দর মদনগঞ্জের সুচিয়ারবন্ধ এলাকায় এবং যিনি মহিন মিস্ত্রির ছেলে।
অন্যান্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন মীর সোহেল (৫৫), যিনি ফতুল্লার লালপুরের মৃত মীর মোজাম্মেল আলীর ছেলে; এস এম ওয়াজেদ আলী খোকন (৬২), যার ঠিকানা নারায়ণগঞ্জ কলেজ রোডের (চাষাঢ়া বালুর মাঠ) ৩৫ নং বাড়ি এবং যিনি মৃত সাদাত আলী মিয়ার ছেলে; আবু হাসনাত শহীদ বাদল (৬৪), যিনি নারায়ণগঞ্জ আল্লামা ইকবাল রোডের ১০/১ নং বাড়ির মোঃ কেরামত আলীর ছেলে; জসিমউদ্দিন (৫৬), যার বাড়ি নারায়ণগঞ্জ খানপুরের সর্দারপাড়া এবং যিনি মৃত মোঃ নুরুদ্দিনের ছেলে; আলহাজ্ব মোঃ আবুল হোসেন (৬৬), যিনি ফতুল্লার পশ্চিম মাসদাইরের রিফাত রিজেনসি (জাপানী বাড়ি) এলাকার ৪০৫ নং বাড়ির মৃত কালু মিয়ার ছেলে; এবং মোঃ জাহাঙ্গীর আলম (৫৮), যিনি বন্দর কলাগাছিয়ার শুভকরদির হাজী মোঃ রহমত উল্লাহর ছেলে।
এই মামলায় আরও আসামি করা হয়েছে মোঃ আদনান কবিরকে (৩৮), যার ঠিকানা ফতুল্লার নিউ জামতলার ৬/২ নং বাড়ি এবং যিনি কবিরুল ইসলামের ছেলে; কবির হোসেনকে (৫৫), যিনি নারায়ণগঞ্জ শীতলক্ষ্যার তামাকপট্টির তুলারাম মোড়ের মৃত আমানউল্লাহর ছেলে; মোঃ আঃ করিম বাবু ওরফে ডিশ বাবুকে (৫৩), যার ঠিকানা নারায়ণগঞ্জ পাইকপাড়ার আমিনা মঞ্জিল এবং যিনি মৃত মোঃ আব্দুল গফুরের ছেলে; এবং মোঃ রিয়নকে (২৮), যিনি একই ঠিকানার মোঃ আঃ করিম বাবুর ছেলে। এছাড়াও আসামি করা হয়েছে মিনহাজ উদ্দিন আহমেদ ভিকিকে (৩৭), যার বাড়ি ফতুল্লার মাসদাইরে এবং যিনি ফয়েজউদ্দিন আহমেদ লাভলুর ছেলে; আব্দুল জাব্বারকে (৫৭), যিনি মুন্সিগঞ্জের কালীন্দিপাড়ার মৃত মোঃ খলিল দালালের ছেলে; মইনুল হাসান বাপ্পিকে (৫১), যার ঠিকানা ফতুল্লার নিউ চাষাঢ়ার (জামতলা) নতুন ১৫/১, পুরাতন ২৩ নং বাড়ি এবং যিনি মৃত এম এ মালেকের ছেলে; এহসানুল হক নিপুকে (৪৮), যার বাড়ি ফতুল্লার মাসদাইরের ১৩/১ শের এ বাংলা সড়কে এবং যিনি মৃত একলাছ উদ্দিন আহমেদের ছেলে; অনুপ কুমার সাহাকে (৬২), যার ঠিকানা ফতুল্লার উত্তর চাষানে এবং যিনি রবি সাহার ছেলে; আব্দুল কাদিরকে (৬৬), যিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি এবং ফতুল্লার সন্তাপুরের (ডাক্তার বাড়ী) বাসিন্দা; দেবদাস সাহাকে (৬৩), যার ঠিকানা নারায়ণগঞ্জ টানবাজারের ৩৭ এস এম মালেহ রোডের মৃত রাখাল চন্দ্র সাহার ছেলে; এবং সোহাগ রনিকে (৪০), যিনি ফতুল্লা মাসদাইরশের এ বাংলা রোড (এন এস টাওয়ার) এলাকার শাহ জামাল তোতা মিয়ার ছেলে।
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ইন্সপেক্টর (অফিসার ইনচার্জ) নাছির উদ্দিন জানান, পুলিশ ইতিমধ্যেই এই চাঞ্চল্যকর ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।