অধ্যবসায়, নিয়মিত অনুশীলন আর কাজের প্রতি দায়বদ্ধতা তাঁকে এনে দিয়েছে তরুণ প্রজন্মের নতুন অনুপ্রেরণার পরিচয়।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুর ইউনিয়নের ললাটি গ্রামের ছেলে ফাহিম। বাবা মোজাম্মেল হক সাদামাটা পরিবারের সন্তান হয়েও স্বপ্ন দেখেছেন বড় মঞ্চে দাঁড়ানোর। শৈশব থেকেই সংবাদপাঠের প্রতি তাঁর আকর্ষণ ছিল প্রবল। স্কুলে পাঠ্যবই পড়ার সময়ই উচ্চারণ ও কণ্ঠের দৃঢ়তা দেখে শিক্ষকরা বলতেন একদিন পর্দায় সংবাদ পড়বে এই ছাত্র। সেই ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি করেই তিনি পা রাখেন টেলিভিশন সাংবাদিকতায়।মানুষের কাছে তথ্য পৌঁছে দেওয়া এবং সত্য ভাষণের দায়বোধ তাঁকে সংবাদ উপস্থাপনায় আরও দৃঢ় করে।
সোনারগাঁয়ের স্কুল–কলেজ শেষে ২০২৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্সে প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন তিনি। বর্তমানে মাস্টার্সে অধ্যয়ন করছেন। পড়াশোনা ও কাজ দুটোই সমান মনোযোগে সামাল দেন ফাহিম।
বর্তমান সময়ের সংবাদ উপস্থাপনার চ্যালেঞ্জ নিয়ে তাঁর মত, প্রতিযোগিতা এখন বহুগুণ বেশি হলেও সুযোগও বেড়েছে। টেলিভিশন থেকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম সব মিলিয়ে গণমাধ্যম এখন আরও গতিশীল। প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেদের দক্ষতাও বাড়াতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
পথচলায় বাধা ছিলই। শুরুতে ব্যর্থতা, অনুশীলনের চাপ, আত্মবিশ্বাস হারানোর মুহূর্ত এসব পেরিয়েই এগিয়েছেন তিনি। কলেজের এক শিক্ষকের উৎসাহ এবং পরিবারের দৃঢ় সমর্থন তাঁর শক্তির জায়গা। কাজী টিভির চেয়ারম্যানসহ সহকর্মীদের সহযোগিতা তাঁর পেশাগত ব্যস্ততায় দিয়েছে নতুন গতি।
স্মরণীয় এক ঘটনার কথা বলতে গিয়ে ফাহিম জানান, একবার লাইভ সংবাদ পড়ার সময় হঠাৎ মুখে মশা ঢুকে যায়। তবুও থেমে না গিয়ে মাথা ঠান্ডা রেখে পুরো বুলেটিন শেষ করেন তিনি। সহকর্মীদের প্রশংসা তাঁকে আরও আত্মবিশ্বাসী করে তোলে।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেন,বাংলাদেশের গণমাধ্যম অনেক এগিয়েছে। তবে পুরোপুরি স্বাধীন বলা যায় না। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা এখনও বড় চ্যালেঞ্জ। সত্যের পথে অটল থাকাই একজন সাংবাদিকের প্রকৃত শক্তি।
নিজের সবচেয়ে বড় অর্জন প্রসঙ্গে ফাহিম বলেন, নবম শ্রেণি থেকেই নিজের পড়াশোনা ও পরিবারের খরচ নিজের উপার্জনে চালাচ্ছেন তিনি। মানুষের সুখ–দুঃখে পাশে থাকতে পারাটাকেও তিনি জীবনের বড় সাফল্য মনে করেন।
সংবাদ উপস্থাপনা তাঁকে শুদ্ধতা শিখিয়েছে, মডেলিং দিয়েছে আত্মবিশ্বাস, আর শিক্ষকতা তাঁকে মানুষের আরও কাছাকাছি নিয়ে গেছে। কঠোর সময়–পরিকল্পনা, শৃঙ্খলা ও নিজের প্রতি অটল বিশ্বাস এই তিন শক্তিকে সঙ্গী করেই তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন একসঙ্গে তিন দুনিয়ার সাফল্য নিয়ে।।
ভবিষ্যতে আরও বড় প্ল্যাটফর্মে কাজ করে দেশের গণমাধ্যম, সংস্কৃতি ও শিক্ষাক্ষেত্রে ইতিবাচক অবদান রাখার স্বপ্ন দেখেন তিনি। তাঁর গল্প প্রমাণ করে ইচ্ছা, সাধনা আর সৎ পরিশ্রম থাকলে বয়স কখনোই সীমা নয়।