নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলায় পঞ্চমী ঘাট উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত লোহা ও লোহাজাতীয় বস্তু সুবিধাজনক দামে ক্রয় করতে না পারায় বিদ্যালয় ভাঙচুর এবং শিক্ষক-কর্মচারীদের লাঞ্ছিত ও অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ১০ জন নামীয় ও ১৫-২০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তির বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, পঞ্চমী ঘাট উচ্চ বিদ্যালয়ের অকেজো বেঞ্চের লোহা ও লোহাজাতীয় বস্তু বিক্রির জন্য গত ১৮/০৯/২০২৫ তারিখে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী গত ০৮/১১/২০২৫ তারিখে বিক্রয় কমিটি সর্বোচ্চ দরদাতা মো. মহসিনের কাছে ১,৩৭,৫৪/- টাকায় মালামাল বিক্রি করে। স্থানীয় মো. কাউছার (পিতা- অলিউল্লাহ) তার পছন্দের লোক দিয়ে মালামালের দাম বলিয়েছিলেন। কিন্তু মহসিন তার চেয়ে বেশি দাম দেওয়ায় কর্তৃপক্ষ মহসিনের কাছে মালামাল বিক্রি করে। এতে কাউছার ও তার লোকজন কর্তৃপক্ষের ওপর ক্ষিপ্ত হয়।
জানা গেছে, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি নিয়েও কাউছারের সঙ্গে মতবিরোধ রয়েছে। এর জের ধরে গত ০৮/১১/২০২৫ তারিখে সর্বোচ্চ দরদাতা মো. মহসিনকে মালামাল ওজন দিয়ে ডেলিভারি নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে বিকেল ৫:৫০টা বেজে যায়। মহসিনের দোকান বিদ্যালয়ের কাছাকাছি হওয়ায় তিনি এক গাড়ি মাল কাঁচা রশিদ ছাড়াই তার দোকানের উদ্দেশে রওনা দেন। পঞ্চমী ঘাট বাজার অতিক্রম করার পরই মো. কাউছার ও তার দলবল গাড়িটি আটক করে।
পরে রাত ৮:৩০টায় কাউছার ও তার দলবল বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে গেট ও জানালা ভাঙচুর করে। তারা শিক্ষক ও কর্মচারীদের ওপর আক্রমণের উদ্দেশ্যে গ্রিল ভাঙার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে কাউছার, মনির (পিতা- আউয়াল), মো. নাঈম (পিতা- আবুল হোসেন), বিল্লাল (পিতা- মৃত হোসেন আলী মাদবর), আরিফ (পিতা- মো. জয়নাল), মাসুদ (পিতা- মো. দুলাল), সাহেদ (পিতা- বিল্লাল, সাং- গোলনগর), শরিফ (পিতা- খেজমত আলী), রাকিব (পিতা- নবির হোসেন), আলমাছ (পিতা- করম আলী, সর্ব সাং- নানাখী, সাদীপুর, থানা- সোনারগাঁও, জেলা- নারায়ণগঞ্জ) সহ অজ্ঞাতনামা আরও ১৫-২০ জন গ্রিল ভেঙে অফিস কক্ষে প্রবেশ করে পশ্চিম পাশের দুটি জানালার থাই গ্লাস ভাঙচুর করে।
হামলাকারীরা বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুল বাতেন সহ পাঁচজন শিক্ষক ও কর্মচারী এবং মালামাল ক্রেতা মহসিনকে বিদ্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখে। তারা মালামাল বিক্রির ১,৩৭,৫৪/- টাকা দাবি করে। সেই টাকা দিতে অস্বীকার করলে তাদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে প্রায় দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।
পরবর্তীতে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করার পর সোনারগাঁও থানার পুলিশের সহায়তায় শিক্ষক ও ব্যবসায়ী অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত হন। পুলিশের গাড়ির শব্দ শুনে কাউছার ও তার দলবল পালিয়ে যায়।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুল বাতেন বাদী হয়ে সোনারগাঁও থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। পাশাপাশি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বরাবরও একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এলাকায় এই ঘটনার পর থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। স্থানীয় জনগণ, বিদ্যালয়ের শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটির সদস্যবৃন্দ, কর্মচারী ও ছাত্র-ছাত্রীরা অবিলম্বে অভিযুক্ত সন্ত্রাসীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছেন।