যথাযথ মর্যাদা ও জোরালো দাবির মধ্য দিয়ে আজ নারায়ণগঞ্জে পালিত হলো গার্মেন্টস শ্রমিক অভ্যুত্থান দিবস। ২০০৩ সালের ৩ নভেম্বরের ঐতিহাসিক শ্রমিক আন্দোলনের শহীদ আমজাদ হোসেন কামালের আত্মত্যাগকে স্মরণ করে, নারায়ণগঞ্জ জেলা শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য জোটের উদ্যোগে এক সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
সোমবার ( ৩ নভেম্বর ) সকাল ৮টায় বিসিকে পেনট্যাক্স ড্রেস লি. এর সামনে শহীদ আমজাদ হোসেন কামালের মৃত্যুস্থলে নির্মিত বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। এরপর বিসিক ২ নং গলিতে এক শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বিপুল সংখ্যক শ্রমিক ও নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য জোটের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান ইসমাইলের সভাপতিত্বে সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হোসেন। এছাড়াও নৌ-পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান মাস্টার, বিপ্লবী গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী, গার্মেন্টস শ্রমিক নেতা মামুন চৌধুরী, ইয়াদুল ইসলাম ইশার, নুরু ইসলাম, রাজিব চৌধুরী, মুকুল দেবনাথ, সাইদুল ইসলামসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ ২০০৩ সালের ৩ নভেম্বরের ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন। তাঁরা জানান, ঐদিন ফতুল্লার বিসিকে প্যানটেক্স ড্রেস লি. এর শ্রমিকরা ৮ ঘণ্টা কাজ, ওভারটাইমে দ্বিগুণ মজুরি, দুই ঈদে দুই বোনাসসহ ১৮ দফা দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। শান্তিপূর্ণ এই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে কারখানার শ্রমিক আমজাদ হোসেন কামাল নিহত হন।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের পর আন্দোলন নারায়ণগঞ্জের সমস্ত গার্মেন্টস শ্রমিকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এবং এক তীব্র আন্দোলনে রূপ নেয়। শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ শক্তির মুখে গার্মেন্টস মালিকরা দাবি মেনে নিতে বাধ্য হন এবং পরবর্তীতে বিকেএমইএ অফিসে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সেই থেকে প্রতি বছর ৩ নভেম্বর গার্মেন্টস শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের দিন হিসেবে “গার্মেন্টস শ্রমিক অভ্যুত্থান দিবস” পালিত হয়ে আসছে।
নেতৃবৃন্দ বর্তমান গার্মেন্টস শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মান নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তাঁরা বলেন, “গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি দিয়ে জীবনযাপন করা দুরূহ হয়ে পড়েছে। জিনিসপত্রের দাম বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা শ্রমিকের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।” তাঁরা বর্তমান বাজার মূল্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির জোরালো দাবি জানান।
এছাড়াও, নেতৃবৃন্দ শ্রম আইনের অপপ্রয়োগের তীব্র সমালোচনা করেন এবং শ্রমিক স্বার্থবিরোধী ধারাগুলো বাতিল করার আহ্বান জানান। তাঁরা স্কপের প্রস্তাবনা অনুযায়ী বিধিমালা সংশোধনী আনারও দাবি জানান। বক্তারা শহীদ আমজাদ হোসেন কামালের আত্মত্যাগের সংগ্রাম থেকে শিক্ষা নিয়ে গার্মেন্টস শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে আরও শক্তিশালী করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
সমাবেশ শেষে একটি বিশাল মিছিল বিসিকের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে, যেখানে শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য মজুরি ও অধিকার আদায়ের স্লোগান দেন।