নারায়ণগঞ্জের মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার ১৫৩ মাস পূর্ণ হলো। দীর্ঘ এই সময়েও বিচার প্রক্রিয়া শুরু না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিহতের স্বজন ও বিশিষ্ট নাগরিকরা। এই উপলক্ষ্যে শুক্রবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করেছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট।
সমাবেশে ত্বকীর বাবা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি অভিযোগ করেন, বিগত সরকারের আমলে নারায়ণগঞ্জে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়েছিল। তিনি ত্বকী হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে শামীম ওসমান, তার ছেলে অয়ন ওসমান, ভাতিজা আজমেরী ওসমান এবং সহযোগী শাহ নিজামসহ জড়িত সকলকে অভিযোগপত্রে (চার্জশিট) অন্তর্ভুক্ত করে দ্রুত আদালতে জমা দেওয়ার দাবি জানান।
নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি মনি সুপান্থর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক দীনা তাজরিনের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট এবি সিদ্দিক, সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্য সচিব হালিম আজাদ, দৈনিক খবরের পাতার সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহাবুবুর রহমান মাসুম, সিপিবির জেলা সভাপতি শিবনাথ চক্রবর্তী, বাসদ জেলা আহবায়ক নিখিল দাস, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক তরিকুল সুজন প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে রফিউর রাব্বি বলেন, ‘‘শেখ হাসিনার শাসনামলে নারায়ণগঞ্জে আইয়ামে জাহেলিয়াতের ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। খুন, হত্যা, চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্বের মাধ্যমে জনজীবন দুর্বিষহ করে তোলা হয়েছিল। ত্বকীর ঘাতকরা চিহ্নিত হলেও প্রশাসন তাদের নিরাপত্তা দিয়েছে। সব জেনেও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘাতকদের পক্ষ নিয়েছিলেন।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘ত্বকী হত্যার বিচারের ধার্য তারিখ ৯৯ বার অতিবাহিত হলেও এখনো অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেওয়া হয়নি। আমরা বিশ্বাস করি, বর্তমান সরকারের শেখ হাসিনার মতো ঘাতকদের রক্ষা করার কোনো অসৎ উদ্দেশ্য নেই। তাই আসন্ন নির্বাচনের ডামাডোল শুরু হওয়ার আগেই এই হত্যার অভিযোগপত্র দ্রুত পেশ করতে হবে।’’
সমাবেশ থেকে বক্তারা ত্বকী হত্যাসহ সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি, তনু এবং নারায়ণগঞ্জে ওসমান পরিবার দ্বারা সংঘটিত সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরীর শায়েস্তা খাঁ রোডের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হন তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। দু’দিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে তদন্তকারী সংস্থা র্যাব ২০১৪ সালে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিল, ওসমান পরিবারের নির্দেশেই ত্বকীকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে প্রতি মাসের ৮ তারিখ বিচার ও আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করে আসছে নারায়ণগঞ্জবাসী।