গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি পুণঃনির্ধারণের জন্য গঠিত মজুরি বোর্ডের ২২ অক্টোবরের নির্ধারিত সভায় মালিকপক্ষ এবং শ্রমিকপক্ষের জমা দেওয়া মজুরি প্রস্তাবকে প্রত্যাখান করে এবং অবিলম্বে গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২৩ হাজার টাকা ঘোষণার দাবিতে গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার উদ্যোগে আজ বিকাল ৪ টায় নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও শহরে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি সেলিম মাহমুদের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কাদির, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শরীফ, সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সভাপতি রুহুল আমিন সোহাগ।
নেতৃবৃন্দ বলেন, গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণের জন্য গঠিত মজুরি বোর্ড ইতিমধ্যে তাদের মজুুরি নির্ধারণের নির্ধারিত সময় অতিক্রম করে এসেছে। সময়ক্ষেপনের অপকৌশল গ্রহণ করার পাশাপাশি মজুরি বোর্ডে মালিকপক্ষ যে মজুরি প্রস্তাব করেছে তা শ্রমিকদের সাথে তামাশার শামিল। নেতৃবৃন্দ বলেন, ২০১৮ সালে শ্রমিকদের মজুরি দাবি ছিল ১৮ হাজার টাকা। শ্রমিকদের সেই দাবি উপেক্ষা করে মাত্র ৮ হাজার টাকা মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছিল যা ছিল ৯৬ ডলারের সমান। বর্তমানে বেসরকারিভাবে প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ১১৮ টাকা দরে ৯৬ ডলারের বর্তমান মূল্য হয় ১১৩২৮ টাকা। অপরদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বূরোর হিসাব অনুসারে ২০১৭-১৮ সাল থেকে প্রতিবছর গড় মূল্যস্ফীতি কমপক্ষে ৬.৩৭ শতাংশ অর্থাৎ পাঁচ বছরের চক্রবৃদ্ধিতে মূল্যস্ফীতি কমপক্ষে ৩২ শতাংশ যদিও প্রকৃত মুল্যস্ফীতি এর চেয়ে অনেক বেশি যার ফল হলো ২০১৮ সালের ৮ হাজার টাকার সমান মজুরি হতে হলে বর্তমানে তার পরিমান হতে হবে প্রায় ১১ হাজার টাকা অথচ মজুরি বোর্ডে মালিক পক্ষের প্রতিনিধিরা মজুরি প্রস্তাব করেছে মাত্র ১০ হাজার ৪২০ টাকা। অর্থাৎ ২০১৮ সালের ২৮ বিলিয়ন ডলার পোশাক শিল্পকে ২০২৩ সালে ৪৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার প্রধান কারিগরদের পুরস্কারের বদলে শাস্তি পেতে হবে, তাদের জীবনমান উন্নয়নের পরিবর্তে তাদের অপুষ্টি-অনাহারকে সঙ্গী করে জীবন কাটাতে হবে। এই প্রস্তাবের মধ্যে দিয়ে গার্মেন্টস মালিকরা প্রমাণ করেছে তারা দেশের উন্নয়ন, জনজীবনের উন্নয়নের পরিবর্তে দেশে দাস সমাজের আধুনিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
মজুরি ঘোষণায় কোনো অন্যায্যতা সহ্য করা হবেনা বলে হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে নেতৃবৃন্দ বলেন, গত নয় মাসে পোষাক রপ্তানির ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। অথচ শ্রমিকের খাবার প্লেটের খাদ্যের মান কমেছে। নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, শ্রমিকদের ৬৫ টি সংগঠনের জোট গার্মেন্টস শ্রমিক এ্যালায়েন্স, বাংলাদেশসহ কোনো সংগঠনই গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি ২৩ হাজার টাকার কম দাবি করেনি। মজুরি বোর্ডে শ্রমিক প্রতিনিধির প্রস্তাবে শ্রমিকদের দাবির প্রতিফলন না ঘটার নিন্দা জানায় এবং অবিলম্বে ন্যূনতম মজুরি ২৩ হাজার টাকা ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় উদ্ভুত পরিস্থির জন্য গার্মেন্টস মালিকদের দায় নিতে হবে। নেতৃবৃন্দ গার্মেন্টস শ্রমিকদের ২৩ হাজার টাকা মজুরির দাবি পূরণে ক্রেতা, ব্রান্ডদেরও ভূমিকা রাখার আহবান জানান।
মজুরি প্রস্তাবের নামে গার্মেন্টস শ্রমিকদের সাথে তামাশার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে আগামীকাল নারায়ণগঞ্জ, আশুলিয়া, গাজিপুরসহ শিল্পাঞ্চলগুলিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করবে গার্মেন্টস শ্রমিকরা। নেতৃবৃন্দ, সংশ্লিষ্ট সবাইকে কর্মসূচি সফল করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহবানন জানান।