শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক হলো দেওভোগের আলী আহাম্মদ চুনকা সড়ক। এ সড়কটির পুরাতন নাম লক্ষ্মী নারায়ণ আখড়া সড়ক বা এলএনএ রোড।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৪ ও ১৬নং ওয়ার্ডের কোলঘেঁষে যাওয়া এ সড়কটিই নারায়ণগঞ্জ ডায়বেটিক হাসপাতালসহ আরও বেশ কয়েকটি স্বাস্থ্য ক্লিনিকের প্রধান সড়ক। ফলে প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে অপারেশনের রোগী ও গর্ভবতি নারীসহ প্রায় সকল প্রকার ঝুঁকিপূর্ন রোগীদের এ সড়ক দিয়েই হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে যেতে হয়। এছাড়া কাশিপুর, বক্তাবলী ও মুন্সীগঞ্জ জেলাসহ ফতুল্লার বিসিক শিল্পনগরীতে যাতায়াতের সহজ পথ হওয়ায় এ সড়ক দিয়েই প্রতিদিন প্রায় শত শত সাধারন মানুষ ও গার্মেন্টস কর্মীরা চলাচল করে থাকে। ফলে এ সড়কের গুরুত্ব ও ব্যস্ততা অন্যান্য সড়কের তুলনায় কিছুটা বেশি। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে, শহরের অন্যতম ব্যস্ততম এ সড়কটি দীর্ঘ প্রায় ৫ বছর ধরে সংস্কারের অভাবে বেহাল দশায় পরিনত হয়েছে।
পৌর পিতা আলী আহাম্মদ চুনকার নামে এ সড়কটির নামকরন করা হলেও খোদ চুনকার কন্যা নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা: সেলিনা হায়াৎ আইভীরই চরম অবহেলা রয়েছে এ সড়কটি সংস্কারে। শুধু তাই নয়, মেয়র আইভী নিজেও এ ওয়ার্ডের বাসিন্দা। তার চোঁখের সামনে এ সড়কটির কারণে লাখো মানুষ ভয়াবহ দুর্ভোগ পোহালেও তিনি যেন সব দেখেও না দেখার ভান করে আছেন, এমনটাই অভিযোগ ভুক্তোভোগীদের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আলী আহাম্মদ চুনকা সড়কের দেওভোগ কৃষ্ণচূড়ার মোড় থেকে পানির ট্যাংকি এলাকা পর্যন্ত সড়কটিতে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। গর্তগুলো এতটাই ঝুঁকিপূর্ণ যে, যেকোন যানবাহনকে এ পথে যেতে হলে অনেকটাই বেগ পেতে হয়। প্রতিনিয়ত এ গর্তে পরে অটোরিকশা, মিশুক ও মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন দুর্ঘটার শিকার হচ্ছে। এসব দুর্ঘটায় আহত হচ্ছেন অনেক নর-নারী ও শিশু। এছাড়াও সামান্য বৃষ্টিতে এ সড়কটি পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় গর্তগুলো বুঝা যায়না। ফলে যানবাহনগুলো গর্তে পরে উল্টে চালক ও যাত্রীরা গুরুতর আহত হচ্ছেন।
বর্তমান সড়কের পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন জুয়েল রানা নামে এক যাত্রী। তিনি যাচ্ছিলেন ভোলাইল মিষ্টি দোকান এলাকায়, সেখান থেকে তিনি আবার যাবেন নিজ গ্রাম বক্তাবলীতে। তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশের মানুষ কি পাপ যেন করছিলাম, যার কারণে আমাদের পদে পদে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এ সড়কটি দিয়ে আমার প্রতিদিন চারবার চলাচল করতে হয়ে। যতবারই আসি-যাই, মনেহয় দোযখের মধ্যদিয়ে যাচ্ছি। রাস্তার যে ভয়াবহ অবস্থা আর যে পরিমান ঝাঁকুনি, দমটা বাইর হইয়া যায়।
হাসপাতাল থেকে অ্যাপেন্ডিসাইটিসের অপারেশন করিয়েছেন সুমন নামে অটোচালক। ডাক্তার বলেছে তিন মাস টোটাল বেডরেষ্টে থাকতে। কিন্তু দু’মাস শেষ না হতেই তাকে গাড়ী নিয়ে বের হতে হয়েছে পেটের তাগিদে। রাস্তাটির বিষয়ে তিনি বলেন, ভাই ওই ভাঙ্গা রাস্তটি দিয়ে যখন গাড়ী চালাই ভয়ে কলিজা ধরফর করে। গাড়ী একদম কাঁত হয়ে যায়। মনে হয়, এই বুঝি গাড়ী উল্টে গেলো। যে ভাঙ্গা রাস্তা, সারাক্ষণ টেনশনে থাকি, ‘কখন যানি আমার বুকের সেলাইটা ছিড়ে যায়।’
সাড়ে ৪ মাসের অন্ত:সত্ত্বা জোৎস্না যাবেন নিতাইগঞ্জ মা ও শিশু চিকিৎসা কেন্দ্রে। সাথে তার স্বামী ইকবাল হোসেন। তিনি নয়ামাটির এক হোসিয়ারীতে ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। রাস্তায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন একটি মিশুকের জন্য। এ অবস্থাতেই সড়কটির প্রসঙ্গে কথা হয় তার সাথে। তিনি বলেন, আমার স্ত্রী অন্ত:সত্ত্বা। ওকে নিয়ে এই পর্যন্ত দু’বার চেকআপ করাতে মা ও শিশু চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে গেছি। আজ আবার হঠাৎ বমিটা বেড়েছে। তাই আবার চেকআপ করাতে নিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু ওকে নিয়ে যখনই রাস্তায় আসি ভয়ে হৃদয়টা কেঁপে ওঠে। রাস্তার যে খারাপ অবস্থা, এত ঝাঁকুনি ওর জন্য এটা ক্ষতিকর। মেয়রতো এবার তেমন কোন কাজই করলো না। ওনার বাবার নামে এ সড়ক। কিন্তু তিনি তার মেয়ে হয়েও এ রাস্তাটি সংস্কারে অবহেলা করছেন। এটা সত্যি দু:খজনক। তাছাড়া তিনি (মেয়র আইভী) নিজেও এ ওয়ার্ডের বাসিন্দা। তাকে আর কি বলবো? তিনিতো সবই দেখছেন। আসলে তার এ অবহেলায় আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। তার কাছে অনুরোধ থাকবে, দয়াকরে এ সড়কটি দ্রুত সংস্কার করুন, আমাদের দিকে একটু তাকান।
এ বিষয়ে মেয়র ডা: সেলিনা হায়াৎ আইভী অবগত আছেন উল্লেখ করে স্থানীয় কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান মনির বলেন, এ রাস্তাটি মেয়রের নলেজে আছে। খুব দ্রুতই এ রাস্তাটি সংস্কার করা হবে।
কবে নাগাদ রাস্তাটি সংস্কার করা হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত সিটি কর্পোরেশনের কোন বাজেট হয় নাই। বাজেট হলে দ্রুত টেন্ডারের মাধ্যেমে এ সড়কটি সংস্কার করা হবে। এ রাস্তার মাপযোগ সব শেষ, শুধু অপেক্ষা বাজেটের। বাজেট আসলেই নারায়ণগঞ্জের সকল রাস্তার আগে এ সড়কটি সংস্কার করা হবে।